চুয়াডাঙ্গায় গমের চালানে বালি ও পাথর উদ্ধার ঘটনায় ৩ তদন্ত কমিটি

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১২ পিএম | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:১৪ পিএম

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি সদর খাদ্যগুদামে আসে। ছবি: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি সদর খাদ্যগুদামে আসে। ছবি: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গায় সদর উপজেলা খাদ্য গুদামে পরিবহন ঠিকাদারের গাড়ি থেকে গম খালাসের সময় গমের বস্তার বদলে ২৮টি বালিভর্তি বস্তা ও ৬টি বড় পাথর উদ্ধারের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কাভার্ড ভ্যান ও  ট্রাকেরচালক এবং চালকের সহকারিদের নজরদারিতে রাখা হলেও ট্রাকচালকরা তিন সহকারিকে রেখে পালিয়ে গেছেন।

আটককরা হলেন- খুলনা ৭ নম্বর জোড়াগেট এলাকার শাহাদত হোসেনের ছেলে হৃদয় (১৯), একই এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৩) ও ঝালকাঠি কাঁঠালিয়া ভান্ডারিয়া গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে হোসেন আলী (২০)।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি মালামাল আত্মসাতের অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জোনাকী পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী হুমায়ন কবির, মেসার্স সরকার এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী তাপস সরকার ও মেসার্স সানরাইজ জুট ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী তাহমিনা আলমসহ মোট ১২ জনের নাম উল্লেখ করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলা নং-০৪ তারিখ-০৭.০২.২০২৩। এর আগে এ সমস্ত পরিবহন ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়।

তিনি জানান, গম খালাসের সময় গাড়িতে গমের বস্তার বদলে বালি ও পাথর পাওয়ায় চালক এবং সহকারীদের গত রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে একটি ঘরে নজরদারিতে রাখা হয়। গতকাল সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে চা খাওয়ার কথা বলে বের হয়ে চালকরা আর ফিরে আসেননি। চালক ও সহকারীরা পালিয়ে গেলেও সমস্যা হবে না। গাড়ির মালিকদের মাধ্যমে তাদের ধরে আনা হবে। 

তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা গম খুলনায় পৌঁছানোর পর ৪ নম্বর ঘাট থেকে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ২টি কাভার্ড ভ্যান ও ৪টি ট্রাকে করে চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়। চালান অনুযায়ী ৬টি গাড়িতে মোট একহাজার ৬৩৩ বস্তায় ৯৯ হাজার ৮১৬  কেজি গম ভর্তি করা হয়। গম ভর্তি গাড়িগুলো রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে পৌঁছায়। গমসহ গাড়িগুলো ওজন করে গুদামে ঢোকানো হয়। এরপর একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে গম খালাসের সময় ৭টি বালির বস্তা পাওয়া যায়। এরপর একে একে সব কটিতেই তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিকালে বিপুল বালি ও বড় ধরনের পাথর পাওয়া যায়। 

এ ঘটনায় জেলা খাদ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শাখা পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর ২ সদস্য হচ্ছেন- চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা বানু। 

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা। অপর ৩ সদস্য হচ্ছেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ. কে. এম. শহিদুল হক। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। জিজ্ঞাসাবাদ করেন ট্রাক চালকের ৩ সহযোগীকে। এরপর তাদেরকে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

অপরদিকে, খাদ্য মন্ত্রাণালয়ের তদন্ত শাখার ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. শামসুজ্জামানকে। কমিটির সদস্য হলেন- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সেলিমুল আজম এবং সদস্য সচিব চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এ. কে. এম. শহিদুল হক। কমিটিকে তদন্তপূর্বক কি পরিমাণ গম খোয়া গেছে তার মূল্য নিধারণ এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান জানান, সোমবার রাতে খাদ্য গুদামে ট্রাক ফেলে চালক ও তাদের সহযোগীরা পালিয়ে গেছে। তবে চালকের ৩ সহযোগীকে আটক করা হয়। এছাড়া ৪টি ট্রাক, ২টি কাভার্ড ভ্যান, ২৮টি বালির বস্তা ও ৬টি বড় ধরনের পাথর জব্দ করা হয়েছে। 

চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এ. কে .এম. শহিদুল হক জানান, ৬টি গাড়িতে ৯৯ হাজার ৮১৬ কেজি গম আসার কথা। খালাসের পর পাওয়া যায় ৯৬ হাজার ৪৫ কেজি। ঘাটতি ৩ হাজার ৭৭১ কেজি। যা বাজার মূল্যে ২ লাখ ২৬ হাজার ২৬০ টাকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh