জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গের বেদনা

শওকত হোসেন

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫২ এএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব যেখানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে হাঁটছে সেখানে স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। করোনার মহামারির ধাক্কা এখনো ভুগছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে আটকে আছে লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ওপর ‘সেশনজটের’ বোঝা অভিশাপের মতো আবির্ভূত হয়েছে। বিভাগ ভেদে সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে ৩ বছরের সেশনজটের বিপাকে আছে শিক্ষার্থীরা।

একটি শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় জট দেখা দিলে প্রত্যেকটি ব্যাচেই তার প্রভাব পরে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর এতেই দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে একই বর্ষে আটকে আছেন অনেক শিক্ষার্থী। করোনাকালে অন্যান্য পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষাবর্ষ এগিয়ে নেয়। এমনকি পরীক্ষাও শেষ করে ফেলে। সেদিকে অনেক পিছিয়ে পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেটিই পরবর্তীতে আরও বেশি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটা উদাহরণ দেখা যাক, ২০১৮/১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তৃতীয় বর্ষের রুটিন প্রকাশিত হয়নি। একইভাবে আটকে আছে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাও। ফলে দেশজুড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি ও পরিবারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, পরিবারের হাল ধরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের পড়ালেখা ছেড়ে বিয়ের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে পরিবারের চাপে। অন্যদিকে ছেলেদের অনেকেই বেকার জীবনের গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে ছুটছে প্রবাসে। এমনকি অনেকে দেশে থেকেই পড়ালেখার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে মানসিক চাপের কারণে। কিন্তু ধর্য্য ধরে অপেক্ষা করে যারা এখন অব্দি টিকে আছে তাদের ভবিষ্যৎ কী? তারা কি পারবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের হতাশার চাপকে দূরে রেখে স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটতে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, মহামারি করোনার কারণেই সৃষ্টি এ সমস্যা। করোনার দোহাই দিয়েই যেন ঢাকতে চাচ্ছে নিজেদের অক্ষমতা ও ব্যর্থতা। অথচ বহির্বিশ্বসহ আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত সাত কলেজ, কারিগরি কলেজ এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও করোনার মধ্যে পরীক্ষা অথবা প্রমোশনের মাধ্যমে সেশনজট মুক্ত রেখেছে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই পূর্বের ন্যায় তাদের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারে। শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে পারে। একটা প্রজন্মের স্বপ্ন যদি সেশনজটের বিপাকে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সরকার কাদের নিয়ে গড়ে তুলবে স্মার্ট বাংলাদেশ?

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh