রবিউল কমল
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৪ এএম
ফাগুনের পোশাক। ছবি: রবিউল কমল
প্রকৃতি বলছে বসন্ত এসে গেছে। দূরে কোথাও বিরহী কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে। চারদিকে চলছে রঙের খেলা। প্রকৃতি সেজেছে ভিন্নরূপে। এই সাজের সঙ্গে মিল রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোও পোশাকে এনেছে বসন্তের ছোঁয়া। বাগানের ফুল ও প্রকৃতি উঠে এসেছে ফাগুনের পোশাকের নকশায়। হলুদ, বাসন্তী, লাল রঙা পোশাকে সেজে উঠেছে ফ্যাশন হাউসগুলো।
এ সময়ে ফ্যাশন হাউসগুলো তাঁতের শাড়ি, সুতার কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছে। ফতুয়াও থাকছে ফাগুনের পোশাক হিসেবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব পোশাকের ঢং আর ডিজাইনে রয়েছে পরিবর্তন ও নতুনত্বের ছোঁয়া। বেশিরভাগ ফ্যাশন হাউসই বসন্তের পোশাকে উজ্জ্বল রংকে প্রাধান্য দিয়েছে। আর এসব আয়োজনে রয়েছে বাহারি রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রিপিস, টি-শার্ট, শার্ট ইত্যাদি।
এ বছর প্রিন্টের ওপরেই অধিকাংশ পোশাকের ডিজাইন করা হয়েছে। এসব পোশাকের কাপড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ সুতি। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাই-ডাই, ব্লকপ্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিকসহ কারচুপি, হ্যান্ড ও মেশিন এমব্রয়ডারি।
এবার ফাল্গুনের পোশাকে তুলে ধরা হয়েছে তারুণ্যের ভাবকে। বাসন্তী বা হলুদকে ফাল্গুনের রং মনে করা হয়। তবে বর্তমানে আর সেই ধারা নেই। এখন বাসন্তী ও হলুদ রঙের সঙ্গে কমলা, লাল ও নতুন পাতার সবুজ রংকেও বসন্তের রং ধরা হয়।
বসন্তের পোশাক নিয়ে রং বাংলাদেশের তৌসিক আহমেদ বলেন, বিশেষ দিনগুলোতে অনেকেই প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিয়ে একই রকম পোশাক পরতে চায়। এছাড়া উৎসবে রঙিন পোশাক পরতে চান অনেকে। শাড়ি বা কামিজ, পাঞ্জাবি বা ফতুয়া ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারবেন ক্রেতারা। ফাগুনের শাড়িতে বাসন্তী ও হলুদ রঙের আধিপত্য। নতুন পাতার রং হিসেবে সবুজও এসেছে শাড়ি ও পাঞ্জাবির রঙে।
ফ্যাশন ডিজাইনার সাদিয়া আফরিন বলেন, রঙের মাস ফাল্গুন। রং মানেই উৎসব। আর রঙিন উৎসবকে কেন্দ্র করেই চলছে পোশাকে বৈচিত্র্য আনার ভাবনা। বাঙালিয়ানার এই দিনটিকে উৎসবের রঙে রাঙাতে শাড়ি, পাঞ্জাবির নতুন সব কালেকশন থাকছে এবার। সঙ্গে সালোয়ার-কামিজ আর ফতুয়ার রং এবং ডিজাইনেও ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আর রং হিসেবে বাসন্তী, হলুদ ও কমলা ও কাঁচা পাতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ছেলেদের বসন্তের পাঞ্জাবিগুলো করা হয়েছে নানা নকশার আদলে। তবে কাপড় হিসেবে সুতি থাকছে।
এ সময় প্রকৃতিতে হালকা শীত ও হালকা গরম থাকে। তাই অধিকাংশ ফ্যাশন হাউস এ সময় সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। মূলত বসন্ত উৎসবে একরঙা শাড়িই বেছে নেন তরুণীরা। তাই বরাবরই ব্লাউজেও থাকে বাহারি রঙের ছোঁয়া। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যনতুন ডিজাইন। বর্তমানে সামান্য উঁচু গলার ব্লাউজ যে কোনো শাড়িতে মানিয়ে যায়।
তা ছাড়া স্লিভলেস ট্রেন্ডও এখন সব তরুণীর পছন্দের। বসন্তকে কেন্দ্র করে বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে বাসন্তী, গেরুয়া, লাল রঙের শাড়ি। এবারের বসন্ত রঙিন হয়ে উঠবে টাঙ্গাইলের নানা রঙের শাড়িতে। যারা অল্পবয়সী এবং সারা দিন ঘুরে বেড়িয়ে কাটাবেন, তারা সাধারণত টাঙ্গাইলের ব্লক বা স্প্রে করা শাড়ি পরতে পারেন।
সঙ্গে খোঁপায় গুঁজে দিতে পারেন পমপম, জারবেরা বা লাল গাঁদা ফুল। আবার যারা অফিস করবেন তারা পরতে পারেন চিকন পাড়ের তাঁতের শাড়ি। উৎসবের আমেজ চাইলে রংচঙে ব্লাউজ বেছে নিন। গলায় কাঠ-পুঁতি দিয়ে তৈরি মালা, চুলে গাঁদা ফুল, হালকা সাজ এবং সঙ্গে একটা ছোট্ট টিপ।
ব্যস, অফিসের গাম্ভীর্যও নষ্ট হবে না আবার কাজের মধ্যেই নিমন্ত্রণ জানাতে পারবেন ঋতুরাজকে। যারা শাড়ি পরতে অভ্যস্ত নন তারা পরতে পারেন সালোয়ার-কামিজ বা ফতুয়া। আর এতেই পাল্টে যাবে লুক। তখন সেজে উঠবেন ঋতুরাজ বসন্তের ঢঙে।
প্রতিবছরের মতো দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এবারও বসন্তের রঙিন পোশাকের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে। এ বছরও নানা রং, ডিজাইন আর মোটিফের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে সব হাউসে। বিশ্ব রং, ইনফিনিটি, আড়ং, অঞ্জন’স, রঙ, বিবিয়ানা, কে-ক্রাফট, টাস্ট মার্ট, বাংলার মেলা, দেশাল ও নিপুণে পেয়ে যাবেন পছন্দের ফাল্গুনের পোশাক। এ ছাড়া বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং মল এবং নিউমার্কেট ও গাউসিয়া থেকে বেছে নিতে পারেন বাসন্তী পোশাক।
দরদাম
শাড়ি ১ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে পাবেন। পাঞ্জাবির দাম শুরু ৮০০ টাকা থেকে। ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে পছন্দমতো সালোয়ার-কামিজ বেছে নিতে পারবেন। ‘কাপল’ পোশাক নিতে চাইলে সেটাও পাবেন। এর দাম নির্ভর করবে পোশাকের কাজের ওপর। তবে সাধারণত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে কাপল পোশাক কেনা যাবে। কুর্তা বা সিঙ্গেল কামিজ পাবেন ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।