রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫০ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫৩ এএম

রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যসমূহ। ছবি: সংগৃহীত

রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যসমূহ। ছবি: সংগৃহীত

‘পণ্য আমদানি কম হচ্ছে, ডলার নেই, এলসি খোলা যাচ্ছে না’, এগুলো ব্যবসায়ীরা ওপরে ওপরে বলে বেড়াচ্ছেন। আসলে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন রকমের ভোগ্যপণ্য খালাস হচ্ছে এবং সেগুলো চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের গুদামে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঠিক বলছেন পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। আসলে কথাটি ঠিক না, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত তিন-চার মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানির জন্য প্রচুর এলসি খোলা হয়েছে, দেশেও সেসব পণ্যের বেশিরভাগ চলে এসেছে। রোজার আগে বাকিগুলোও চলে আসবে। রোজায় প্রকৃত অর্থে কোনো পণ্যের ঘাটতি হওয়ার কথা না। তারা মজুদ করলে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমবে না।

এভাবেই আক্ষেপের সুরে ভোগ্যপণ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

ডলার ও এলসি সংকটের কারণে ভোগ্যপণ্য আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছিল বলেই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অন্যান্য পণ্যের এলসি কম খুলে ভোগ্যপণ্যের এলসি খুলতে এবং ধারে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। এসব কারণে ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলাও বেড়েছে এবং আমদানিও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় ভোজ্য তেলসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা এ বছর বেড়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ভোজ্য তেলের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৩৮ হাজার টন বেড়ে সেটি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ মেট্রিকটনে। আবার গত নভেম্বর-জানুয়ারি, এই তিন মাস সময়ে পাম অয়েল আমদানি ৪২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৪ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৫ লাখ ৬৬ হাজার টন চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৫৫ হাজার টন বেশি। আবার জানুয়ারিতে খেজুর আমদানির ঋণপত্র ১৩ হাজার টন বেড়ে ২৯ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। ছোলার আমদানি কমলেও মসুর ডালের আমদানি বেড়েছে।

যদিও বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং সংকটের কথা বলে সরবরাহ কমিয়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়েই চলেছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি তিন মাসে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই মাসগুলোর তুলনায় ৪৪ শতাংশ কম। সয়াবিন বীজ আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ টনে। বিগত তিন মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ হাজার টন কম। বিগত তিন মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। মটর ডালের আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। তবে জানুয়ারি মাসে এসব পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে। আর জানুয়ারি মাসের এলসির পণ্যগুলো চলে আসবে রোজার আগে বা রোজার শুরুতেই। সুতরাং রোজার এসব গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি ও মজুদও মন্দ নয়।

গত ২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, রোজার ভোগ্যপণ্যের আমদানি যে বেশ ভালো হয়েছে। রমজান মাস সংশ্লিষ্ট পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না বলে ব্যবসায়ীরা যে অভিযোগ করে আসছেন তা সঠিক নয়। রমজানের পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই একসঙ্গে কাজ করলে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি থাকবে না। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছর অনেক বেশি এলসি খোলা হয়েছে।

তিনি সেদিন পণ্য আমদানির কিছু চিত্রও তুলে ধরে জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিকটন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিকটন। অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিকটন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

এই জানুয়ারিতে একইভাবে ভোজ্য তেল আমদানির জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ মেট্রিকটনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ মেট্রিকটন। এ বছর ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৭ মেট্রিকটন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ মেট্রিকটন। অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারিতে ছোলার এলসি কিছুটা কমেছে।

এ বছর ৪২ হাজার ৫৬৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময় ছিল যার পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ২২৬ মেট্রিকটন। এ বছর ২৯ হাজার ৪৮২ মেট্রিকটন খেজুরের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৯৮ মেট্রিকটন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh