বিবিসি কার্যালয়ে রাতভর তল্লাশি চলবে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪০ পিএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৫ পিএম

আয়কর বিভাগের তল্লাশি চলাকালে দিল্লিতে বিবিসির দপ্তরের বাইরে সংবাদকর্মীদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

আয়কর বিভাগের তল্লাশি চলাকালে দিল্লিতে বিবিসির দপ্তরের বাইরে সংবাদকর্মীদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পর আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি শুরু করেছে ভারতের কর কর্তৃপক্ষ।

যা রাতভর চলবে, এমন কি তা আগামীকাল বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।

জানা যায়, গত মাসে বিবিসি প্রকাশিত একটি তথ্যচিত্রে ২০২২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা তুলে ধরা হয়, যা দেশটিতে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করে। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আজ ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষ বিবিসির নয়াদিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে অভিযান চালায়।

কর্মকর্তারা বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই অফিস সিল করে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং সব ফোন, ল্যাপটপ এবং কাগজপত্র জব্দ করেছেন বলে জানা গেছে।

বিবিসির মুনাফা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এ তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, কর কর্মকর্তারা বিবিসির ২০১২ সালের হিসাবের বিবরণী পরীক্ষা করছেন। তল্লাশি শুরুর ছয় ঘণ্টা পর ল্যাপটপ পরীক্ষার পর কর্মীদের কার্যালয় ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়।

বিবিসির এক সাংবাদিক এনডিটিভিকে বলেন, কর্মকর্তারা আমাদের কর্মীদের ডেস্কটপে লগ ইন করতে বলে এবং তারা ‘ট্যাক্স’ শব্দ ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধান করতে থাকেন।’

কর্মীদের মধ্যে যারা অফিসে নেই, তাদের দূরে থাকতে বলেছে বিবিসি এবং তল্লাশির বিষয়ে কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করতেও নিষেধ করেছে।

টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিবিসি জানায়, কর কর্তৃপক্ষ এখন নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ের বিবিসি কার্যালয়ে আছে এবং আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব এ পরিস্থিতির সমাধান হবে।

কর কর্মকর্তারা অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন যে এটি ‘তল্লাশি’ নয় ‘জরিপ’ এবং ফোনগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

কর কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, ‘আমাদের কিছু বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল এবং এজন্য আমরা বিবিসি কার্যালয় পরিদর্শন করে একটি জরিপ চালাচ্ছি। আমাদের কর্মকর্তারা অ্যাকাউন্ট বই নীরিক্ষা করতে গেছেন, কিছু অনুসন্ধান করতে নয়।’

তবে এনডিটিভিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তারা ব্যালেন্স শিট এবং অ্যাকাউন্টের বিশদ বিবরণের জন্য বিবিসির অর্থ বিভাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। 

এদিকে ভারতের বিরোধীদল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে. সি. ভেনুগোপাল বলেছেন, বিবিসির দপ্তরে আয়কর হানার ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে মোদি সরকার সমালোচনাকে ভয় পাচ্ছে। আমরা ভীতিপ্রদর্শনের এই পদ্ধতিকে কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। এটা অগণতান্ত্রিক এবং এই স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে দেওয়া যায় না।

আরেক কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যখন আমরা আদানি গোষ্ঠীর ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি জানাচ্ছি সংসদে, তখন সরকার বিবিসির পেছনে লেগেছে। একেই বলে বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও বলেছেন, তাদের (বিজেপির) সময় শেষ হয়ে আসছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ভারতে কোনো সংস্থাকে কাজ করতে হলে তাদের ভারতের আইন মেনেই চলতে হবে। তারা যদি আইন মোতাবেক চলে থাকে তাহলে তাদের ভয় কিসের? আয়কর বিভাগকে তাদের কাজ করতে দেওয়া উচিত।

বিবিসিকে বিশ্বের সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিবিসির প্রচারের সঙ্গে কংগ্রেসের এজেন্ডা একদম মিলে যায়।

বিবিসির দপ্তরগুলোতে আয়কর বিভাগের তল্লাশি অভিযান নিয়ে ভারতের সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া একটি বিবৃতি দিয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, আয়কর বিভাগের এই হানা এমন একটা সময়ে হল যখন বিবিসি ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গার ওপরে নির্মিত দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে।

‘তথ্যচিত্রটি নিয়ে যে রাজনৈতিক জলঘোলা হয়েছে, তার মধ্যে সরকার বিবিসির বিরুদ্ধে ভুল এবং পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ রিপোর্টিংয়ের অভিযোগ তুলেছে। তথ্যচিত্র দুটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এবং দেখার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে,’ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে এডিটর্স গিল্ড।

তারা বলছে, সম্প্রতি একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সরকারি নীতি বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করছে যে সব সংবাদমাধ্যম, তাদেরকেই সরকারি এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। এই প্রবণতা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলে মন্তব্য তাদের।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh