অযত্নে-অবহেলায় জবির শহীদ মিনার

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৫ পিএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। ছবি: জবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। ছবি: জবি প্রতিনিধি

প্রতিবছর ভাষা শহীদ দিবস এলেই ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র শহীদ মিনারটি। সারা বছরই অরক্ষিত-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে জবির ব্যতিক্রমধর্মী এ শহীদ মিনার। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এক-দুদিন আগে করা হয় পরিষ্কার। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের সাদা রং দেওয়া জায়গাগুলো নষ্ট হয়ে কালো হয়ে গেছে।এছাড়া প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বাইরের দর্শনার্থীরা ঘুরতে এসে যত্রতত্র খাবারের প্যাকেট, কাগজ ও অন্যান্য ময়লা ফেলে রাখে যা পরিষ্কার করার যেন কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের দর্শনার্থীরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে মূল বেদীতে যত্রতত্র জুতাসহ প্রবেশ করছে।

শহীদ মিনারের আকৃতি দেখে কেউ প্রথমেই না বুঝায় অনেকেই এটিকে অবজ্ঞা বা ভিন্ন চোখে দেখে। এটিকে একটি সাইনবোর্ডেও তুলে ধরার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা খোশ গল্পে মেতে থাকেন, এমনকি অনেকে ঘুমিয়েও থাকেন। এছাড়াও জুতা নিয়ে শহীদ মিনারে ঘুরাঘুরি প্রায় প্রতিনিয়তই দেখা মেলে।

শহীদ মিনারের টাইলস কোথাও অর্ধেক ভাঙা, আবার কোথাও কোথাও টাইলস ও নেই। বেদীর রঙও প্রায় উঠে গেছে। এছাড়াও টাইলসে জমে আছে শ্যাওলার আস্তরণ। শহীদ মিনারের দেওয়ালগুলো পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহীদ মিনারটি নিয়মিত দেখভালও করা হয় না। এতে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শহীদ মিনারটি নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলে অনেকেরই শ্রদ্ধা কমে যাবে। নিয়মিত মিনারটি পরিচ্ছন্ন রাখা হলে তা শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রিক ভাষা সচেতনতা তৈরি করবে না, সারা বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বাইরের দর্শনার্থীদের বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করবে। শুধু একদিন ফুল দেওয়ার জন্যই যেন শহীদ মিনারের অবস্থান না হয় সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

দুঃখ প্রকাশ করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইতি খাতুন বলেন, শহীদ মিনার একটি স্পর্শকাতর স্থান। এটার সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের এমন উদাসীনতা সত্যিই বেদনাদায়ক। প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে দ্রুত যেন শহীদ মিনারের সংস্কার করা হয়।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাশিম বাপ্পি বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান হলেই বহিরাগতরা ঘুরতে আসে৷ এসময় তারা জবির ব্যতিক্রমধর্মী শহীদ মিনারটি না চিনেই জুতা পরে উঠে। মাতৃভাষার রক্ষার্থে শহীদ হওয়া একমাত্র জাতি আমরা। শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনারের এমন শোচনীয় অবস্থা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

বহিরাগত কয়েকজন জুতা পায়ে আড্ডা দেওয়ার সময় তাদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, দেশের সকল শহীদ মিনার একই রকম। এটা যে শহীদ মিনার সেটা আমরা বুঝতেই পারিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি একটু ভিন্ন ধরনের হওয়ায় প্রথমে আমরা এটাকে বসে সময় কাটানোর জন্য একটি স্থাপত্য ভেবেছিলাম।

পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুল কাদের বলেন, শুধু শহীদ মিনার না পুরো ক্যাম্পাসই নোংরা হয়ে আছে। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দুইজন কমে গেছে। তবুও আমি থেকে বাইরের লেবার নিয়ে মাঝে বেশ কয়েকবার পরিষ্কার করিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সংকট হওয়ায় অর্থ দপ্তর সব ফাইল আটকে রেখেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রাধান্য না পেয়ে যদি অন্যকিছু প্রাধান্য পায় তাহলে তো কিছুই করার নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh