মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০৩ এএম
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চতুর্থ শিরোপা জয়। ছবি: সংগৃহীত
নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম আর অপূর্ণতা নিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটের নবম আসর। তবে শেষে এসে শুরুর না পাওয়ার বিষয়গুলো আর মনে রাখেনি কেউ। তবু কিছু অপ্রাপ্তির কথা বলা যায়। যেমন- আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) না থাকায় খেলার মাঠেও প্রায় ম্যাচেই হয়েছে নানা বিতর্ক।
মাঠে আম্পায়ার-ক্রিকেটার দ্বন্দ্ব, মাঠের বাইরে বিপিএলের নানা অসঙ্গতি নিয়ে ক্রিকেটার-কোচরাও সরব ছিলেন। এমনকি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বিপিএলকে নিম্নমানের আয়োজন, মার্কেটিং পলিসিতে ঘাটতিসহ নানা অসঙ্গতির জন্য সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন।
তাতে সমর্থন দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাও। সব বিতর্ক ছাপিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারির ফাইনালের উন্মাদনায় মেতেছেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিতর্ক ঢাকতে নানা আয়োজন ছিল শেষদিন। ফাইনাল শুরুর আগে বিশেষ কনসার্টে গান শুনিয়েছেন মাকসুদ ও ঢাকা, ওয়ারফেজ এবং পপগুরু খ্যাত নগরবাউল ব্যান্ডের জেমস।
তাই ফাইনাল ঘিরে মিরপুর স্টেডিয়াম জুড়েই ছিল মানুষের ঢল। টিকিট নিয়ে হাহাকার ও হাপিত্যেশের কথাও শোনা গেছে। শুরুতে ডিআরএস না থাকায় অন্য প্রযুক্তিগুলোও ছিল না। তবে অতীতের ‘স্লো-মোশন’ প্রযুক্তিকে বিকল্প ডিআরএস হিসেবে প্রয়োগ করলেও সেটি নিরন্তর বিতর্কই তৈরি করেছে, জন্ম দিয়েছে নানা হাস্যরসেরও। এর সঙ্গে ভুল আম্পায়ারিংও বারবারই সমালোচিত হয়েছে।
সে কারণে মাঠে অভিভাবকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের তর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রথম থেকেই বিশ্বের নামি-দামি তারকারা এই বিপিএলে খেলতে আসেননি। তাদের পাওয়াই যায়নি অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের ব্যস্ততা থাকার কারণে। সব মিলিয়ে সাদামাটাভাবেই শুরু ও শেষ হয় বিপিএল।
মানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় ক্রিকেটাররাও এখন আর বিপিএলকে বেছে নিতে একাধিকবার ভেবে থাকেন। এ ছাড়া মাঠে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলাভঙ্গ, ব্যাট-বল ও হেলমেট ছুড়ে অসহিষ্ণু আচরণ প্রকাশ, কোচ-কর্মকর্তা হয়েও আচরণবিধি লঙ্ঘন ইত্যাদি ঘটনাও দেখা গেছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও বিপিএল নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না।
মাঠের পারফরম্যান্সে জাতীয় তারকাদের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হলেও অনেকেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেখানেই সবার উপরের নামটি নাজমুল হোসেন শান্ত। ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থবার শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। তবে সিলেট হেরে গেলেও দলটির ওপেনার শান্ত জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় আর সর্বোচ্চ রানের পুরস্কার।
বাঁহাতি এই ওপেনার বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিপিএলের এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলকে ছুঁলেন। টুর্নামেন্টে ১৫ ম্যাচে মোট ৫১৬ রান করেছেন শান্ত। ৪ ফিফটিতে তার গড় ছিল ৩৯.৬৯। স্ট্রাইক রেট ১১৬.৭৪। সেরার তালিকায় ছিল সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, রনি তালুকদার ও নাসির হোসেনের নামও।
তবে সবাইকে হটিয়ে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতেন শান্ত। মুশফিকুর রহিম টুর্নামেন্টে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার জিতেছেন। কুমিল্লার তানভীর ইসলাম ও রংপুর রাইডার্সের পেসার হাসান মাহমুদ যৌথভাবে শিকার করেন ১৭ উইকেট।
এছাড়া ফাইনালের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন ৫২ বলে ৭৯ রান করা কুমিল্লার বিদেশি ক্রিকেটার জনসন চার্লস। এবারের আসরে আড়াই বছর পর মাঠে নেমে দারুণ খেলেছেন মাশরাফি। সিলেটের এই অধিনায়ক বল হাতে ও মাঠে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠান। শিরোপা জিততে পারলে দারুণ হতো তার জন্য। কারণ অধিনায়ক হিসেবে ফাইনাল ম্যাচটি ছিল ১০০তম ম্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার ফাইনালে পরাজিত হন নড়াইল এক্সপ্রেস।
এদিকে মানের দিক থেকে প্রতিনিয়তই পিছিয়ে পড়ছে বিপিএল। এই যেমন বছরখানেক আগেও বিসিবি কর্তাব্যক্তিরা বড় গলায় বলতেন, আইপিএলের পরই বিপিএল। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে সেসব কণ্ঠ এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। এক বছর আগেও এ আলোচনা হলে হয়তো আইপিএলের পর পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) নাম চলে আসত।
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), বিগ ব্যাশের পর অনেকে বিপিএলকে জায়গা দিতে তেমন কার্পণ্য করতেন না কেউ। বিপিএলকে আরও পিছিয়ে দিতে এ বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট নিয়ে আসছে ছয় দলের মেজর লিগ ক্রিকেট। লিগ আয়োজনের অবকাঠামোর জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট খরচ করছে ১১০ মিলিয়ন ডলার!