বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম
দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
গৃহপরিচারিকার চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক দরিদ্র কিশোরীকে (১৬) নগরীতে এনে ফ্ল্যাটে বন্দী রেখে দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে বরিশাল নগরীর আগরপুর রোডে সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন প্যাদাপাড়ার হাবিব ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। একই সঙ্গে ওই ফ্লাটে জিম্মিদশায় থাকা আরো দুই শিশুকে উদ্ধারের পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এই ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও শিশু-কিশোরী পাচার চক্রের মানছুরা নামের আরেক সদস্যকে বরগুনার তালতলি থেকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ।
এই ঘটনায় কারাগারে যাওয়া নারী পাচারকারী চক্রের সদস্যরা হলেন- বরগুনার তালতলী উপজেলার হুলাটানা এলাকার আবুল কালাম ও তার স্ত্রী রাহিমা বেগম, মো. ইব্রাহিম, খন্দকার জাহিদ এবং একজন দেহপসারিণী। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়িও একই উপজেলায়।
কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, গ্রেপ্তার দম্পতির বিরুদ্ধে মানবপাচার, ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির অভিযোগে এক কিশোরীর মা বাদী হয়ে মামলা করেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানায়, পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে তাকে একই এলাকার প্রতিবেশী মানছুরা নামের এক নারী বরিশালে গৃহপরিচারিকার চাকরির প্রলোভন দেখায়। ওই নারী ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে বাসে করে বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে নিয়ে আসেন।
রূপাতলী আসার পর তার চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নগরীর আগরপুর রোডের হাবিব মিয়ার বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্লাটে নিয়ে আটকে রাখে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি আমার চেয়েও বয়সে ছোট ৫-৬ জন কিশোরী আছে। তাদেরও এভাবে জিম্মি করে দেহ ব্যবসা করাচ্ছে। আমাকে যিনি কিনেছেন তার নাম কালাম এবং তিনি ওই আস্তানা চালান। তার কথা না শুনলে মারধর এবং ধর্ষণ করতেন।
ওই কিশোরী আরো বলেন, আমার মা গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় মেম্বার ও প্রতিবেশী সেই নারীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। তারপর বরিশালের আস্তানা থেকে একদিন ভোর রাতে আমার চোখ বেঁধে মারধর করে গাড়িতে তুলে দেন। মারধরের সময় আমার তলপেটে একাধিকবার লাথি মেরে নির্যাতন করে কালাম। ২২ ফেব্রুয়ারি আমি তালতলির গ্রামের বাড়িতে যাই।
কিশোরীর মা বলেন, আমার মেয়েকে কাজ দেওয়ার কথা বলে আটকে রেখে ধর্ষণ ও মারধর করা হতো। বাইরের লোকদের কাছে রাতযাপনের জন্য বাধ্য করা হতো। বাড়ি ফেরার পরে বিষয়টি জানতে পেরে তালতলি থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বলি এবং মামলা করার প্রস্তুতি নেই। কিন্তু থানার ওসি ধর্ষণ বা নির্যাতনের মামলা না নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মারধরের মামলা করে। এরপর থানা পুলিশের পরামর্শে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় এসে অভিযোগ দেই।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ওই মেয়েকে নিয়ে থানায় আসে তার মা এবং স্বজনরা। তাৎক্ষণিক আমরা ওই মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি এবং অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযানে নেমে পরি। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার রাতেই ফ্লাট থেকে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক এবং সেখানে জিম্মিদশায় থাকা আরো দুই শিশুকে উদ্ধার করি।
ওসি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া অভিযোগকারী কিশোরী এবং উদ্ধার হওয়া অপর দুই শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরাও এসেছেন। চক্রের ফাঁদে পরা অন্য মেয়েদের উদ্ধার এবং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।