নারী তুমি শতরূপা

রবিউল কমল

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৩ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৫ এএম

অপরাজিতা। ছবি: সংগৃহীত

অপরাজিতা। ছবি: সংগৃহীত

একই অঙ্গে এত রূপ’ এই কথাটি নারীদের ক্ষেত্রে আজ আর শুধু অলঙ্কার নয়। বরং একজন নারীর প্রতিদিনের জীবনে বাস্তবও। কারণ পুরোটা জীবন ধরে একজন নারীকে অনেক ভূমিকা পালন করতে হয়। প্রতিটি ভূমিকাতে নিজের সম্পর্ককে যতটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার, ঠিক ততটাই দরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখা। 

নিজের কোনো ভূমিকা পালন করতে গিয়ে কোনো নারীকে যদি মূল্যবোধ, অধিকার বা নিজের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে সেটা ঠিক নয়। কারণ সময় এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই নারীদের কাজ আর চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নারীদের কাজের ক্ষেত্র ও কাজের পরিধি বেড়েছে। এর সঙ্গে টানাপড়েনও বেড়েছে। কারণ জটিল এই সময়ে জীবনের প্রতি মুহূর্তে নানা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়। তাই নিজের সততা ও ধৈর্য ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে যায়।

একজন নারী জন্মসূত্রেই কয়েকটি ভূমিকা অর্জন করেন। যেমন- জন্মের পরপরই বাবা-মায়ের আদরের দুলালি এবং ভাইয়ের বোন ইত্যাদি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ও পরিবারের বাইরে গড়ে ওঠে আরও কিছু সম্পর্ক। বাড়িতে যে আদরের মেয়ে বা বোন, আত্মীয়দের কাছে সে ভাইজি, ভাগ্নি বা নাতনি। বাইরে আবার কোথাও ছাত্রী, কারও বেস্ট ফ্রেন্ড বা পাড়ার অন্য মেয়ের সখি। টিনেজ বয়স পার করতেই তার জগৎটা আরও বড় হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষা, চাকরি, বিয়ে এভাবে নানা সম্পর্কে বাঁধা পড়তে থাকে। তখন আরও অনেক দায়িত্ব পালন করা জরুরি হয়ে ওঠে তার জীবনে। তাই একাধিক ভূমিকা পালন করতে গিয়ে আজকের নারীদের শতরূপা হতে হয়। তবে সব ভূমিকাতে সবাই হয়তো সমান স্বচ্ছন্দ হন না। তাই জীবনের নানা রীতি-নীতি শেখার সঙ্গে শিখতে হবে প্রতিটি ভূমিকা সফলতার সঙ্গে পালনের কৌশল। 

কন্যার ভূমিকা : এই সম্পর্কে কোনো নারীকে নতুন করে বোঝাপড়ার দরকার হয় না। কন্যা হিসেবে একজন নারীর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটাই। তবে কন্যা হিসেবে পরিবারের কাছে কিছু দায় থেকে যায়। কারণ সব মা বাবা সমান হন না। সবার দৃষ্টিভঙ্গি একরকম নয়। এ কারণে বয়ঃসন্ধির সময় অনেক মা বাবা তাদের মেয়েকে বুঝতে পারেন না। তারা বুঝতে পারেন না যে মেয়ের কী সমস্যা হচ্ছে, তাকে কেন বাইরের দুনিয়া টানছে বা কেন সে বদলে যাচ্ছে। আবার জীবনসঙ্গী নির্বাচন নিয়েও মা-বাবার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। অনেক সময় মেয়ের পছন্দ বা মতামতকে মেনে নিতে পারেন না মা-বাবা। এক্ষেত্রে নিজের পছন্দ ও মা-বাবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আবার তারা কিছু চাপিয়ে দিতে চাইলে, যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। 

বোনের ভূমিকা : ভাই-বোনের সঙ্গে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে দেয় শৈশব। এই সম্পর্ক অটুট রাখার দায়িত্ব একজন বোনেরও। ভাইয়ের সঙ্গে টুকটাক ঝগড়া-বিবাদ হতেই পারে। কিন্তু সেগুলো বাড়তে দিলে সম্পর্কে ফাটল ধরবে। সেক্ষেত্রে বোন হিসেবে একজন নারীকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। ভাই ভুল পথে পা বাড়ালে বোনের দায়িত্ব তাকে বোঝানো। ভাই- বোনের সম্পর্কে আরেকটা সমস্যা হলো ভাবি। ভাইয়ের বিয়ের পর অনেক বোন মনে করেন ভাইয়ের ওপর তার অধিকার কমে যাচ্ছে। এটা হয়তো সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। তাছাড়া কোনো সম্পর্ক জোর করে হয় না। বরং পরস্পরের ইচ্ছেকে সম্মান করার মাধ্যমেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। 

স্ত্রীর ভূমিকা : নিজেদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বাইরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। স্বামীর কথা সবসময় মুখ বুজে মেনে নিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। বরং ভুল কিছু বললে বা ভুল করলে তাকে বোঝাতে হবে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজেদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে সঠিক উপায়ে নিজের অধিকার ও মতামতকেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সব বিষয়ে হয়তো মতের মিল হবে না, কিন্তু তাতে যেন ভুল বোঝাবুঝি তৈরি না হয়। নিজেদের মধ্যে সব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ রাখতে হবে। 

মায়ের ভূমিকা : মায়ের ভূমিকাতেই একজন নারী সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ। কারণ সন্তানকে গড়ে তোলার ব্যাপারটা যে কোনো নারীর মাঝে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। তা শিখতে হয় না। তবে অনেক মা মমত্বের কারণে সন্তানের অনেক অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন। আবার সন্তানের মঙ্গলের জন্য অনেক মা মাত্রাতিরিক্ত শাসন করেন, যার ফল হয় উল্টো। একজন মায়ের প্রধান কাজ হলো স্নেহ ও শাসনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা। সন্তানের দক্ষতা ও ব্যর্থতার দিক খুঁজে বের করে বিভিন্ন কাজে উৎসাহিত করা মায়ের দায়িত্ব। সন্তানের মাঝে ভালো কিছু করার ইচ্ছে গড়ে দিতে পারেন একজন মা। তাকে শেখাতে পারেন ভালো ও মন্দের বিচারবোধ। সবসময় সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া যে গুরুত্বপূর্ণ সেটাও একজন মাকে আগে জানতে হবে। তারপর সন্তানকেও সেভাবে বোঝাতে হবে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh