মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে পরিচিত ছিল। ‘ছিল’ বলা হচ্ছে, কারণ এখন আর এই ভেন্যুতে কোনো ম্যাচ হবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই ভেন্যু থেকে নিজেদের সবকিছু সরিয়ে এনেছে। বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা অসহযোগিতা করছে এমন ঘোষণা দিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে এনেছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। আর তাতেই একরকম অপমৃত্যু ঘটেছে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হওয়া স্টেডিয়ামটির।
বলা যায়, বিসিবির সঙ্গে বগুড়া ডিএসএ’র দ্বন্দ্বের বলি হয়েছে স্টেডিয়ামটি। অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি এরই মধ্যে হস্তান্তরও করেছে বিসিবি। মালামালসহ সেখানে কর্মরত বিসিবির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন এ ঘটনার পর স্টেডিয়ামটিতে বিসিবি আর কখনো ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা স্টেডিয়ামের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন নিয়ে স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিসিবির দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। যদিও এই মাঠে নিয়মিত ক্রিকেটীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল বিসিবি। গত ১৭ বছরে এই স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলেও জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল), বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল), যুব ক্রিকেট লিগ (ওয়াইসিএল), ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ টাইগার্সের বিশেষ অনুশীলন ক্যাম্পও হয়েছিল এই বগুড়ায়। কিন্তু হঠাৎই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিসিবির বিরোধ চরমে ওঠে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বিগত কয়েক বছর বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার ফলে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে বিসিবি কর্তৃক নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্ট/ক্রিকেট লিগ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়দায়িত্ব ক্রীড়া পরিষদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিসিবির পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর পরই বগুড়া ডিএসএর পক্ষ থেকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে স্টেডিয়ামটির সংস্কার, উন্নয়ন বা আন্তর্জাতিক কোনো খেলা গত ১৬ বছরেও করতে পারেননি, সেটা আপনাদের অসহযোগিতা।’
এরপরই এ বিষয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম বলেছেন, ‘প্রতিবছর তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্রিকেট আয়োজন করতে হয়, এটা বেশ বিব্রতকর কাজ। এবার তারা যেটা করেছে, আমরা যে শেখ কামাল ওয়াইসিএল করি, তারা এটা বন্ধ করে স্থানীয় লিগ করবে। ডিএসএ সাধারণ সম্পাদকের বোঝার ভুল আছে, স্টেডিয়াম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে নয়, ক্রিকেট বোর্ডের নামে বরাদ্দ।’
ক্রিকেট বোর্ড স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। ১৬-১৭ জন মাঠকর্মী রয়েছে, ম্যানেজার আছে। ক্রিকেট বোর্ডের লিগ বন্ধ করে তারা স্থানীয় লিগ আয়োজন করতে চাওয়ায় বিসিবি সভাপতি শুনেও অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। বিসিবির বিরুদ্ধে মিলনের অভিযোগের বিষয়ে নিজাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন সম্পর্কে বগুড়ার এই কর্মকর্তার হয়তো পরিষ্কার ধারণা নেই।
চাইলেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা যায় না। ট্রান্সপোর্ট, আবাসনসহ অনেক বিষয় আছে, যেটি একসময় বগুড়া থাকলেও এখন আর নেই। এখন সেখান থেকে তারা দূরে সরে এসেছে।’ তবে বগুড়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা, দ্রæত সব সমস্যার সমাধান করে আবারও শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে বিসিবির ক্রিকেটীয় কার্যক্রম ফিরবে।
স্টেডিয়াম সূত্রে জানা যায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে উন্নীত করা হয়। স্টেডিয়ামে চার টাওয়ারে ১০০টি করে মোট ৪০০ ফ্লাডলাইট রয়েছে। এই লাইটগুলো ৮ লাখ ওয়াট আলো সরবরাহ করতে পারে। আন্তর্জাতিক খেলা বন্ধের পরে ২০০৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে একবার ফ্লাডলাইটগুলো জ্বালানো হলেও এরপর সেগুলো আর জ্বলেনি।
এর মধ্যে কোনো লাইট নষ্ট রয়েছে কি না তাও বলতে পারেনি স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। এই মাঠে আগে থেকেই ভালো মানের পাঁচটি উইকেট (পিচ) ছিল। ২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়। ২০০৬ সালে একটি টেস্ট ও পাঁচটি ওয়ানডে হওয়ার পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি বগুড়ায়।