গুলিস্তানে বিস্ফোরণ: আঁতকে উঠার মতো কারণ বেরিয়ে এলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩, ১০:০৭ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩, ১০:৩২ এএম

গুলিস্তানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

গুলিস্তানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শিকার ভবনটির দিকে তাকালেই শিউরে উঠছেন হতাহতদের স্বজনরা। ওই সড়কে চলাচলকারীরাও ভবনের সামনে আসলে একটু থমকে যান। তখন ভবনটির চারপাশ চোখ বুলিয়ে ফের রওনা হন। ভবনটিকে ইতোমধ্যে বিপদজনক ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। এদিকে, অবশেষে জানা গেছে ভবনটিতে বিস্ফোরণের কারণ। কারণটি সামনে আসার পর আঁতকে উঠেছেন বিশ্লেষকরা।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল বলছে, তিতাসের পরিত্যক্ত লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকায় এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে। এখনই অভিযান চালিয়ে এ রকম অপরিকল্পিত ভবন বের করতে না পারলে সামনে আরও কাঁদতে হবে।

দলটি বলছে, যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে তার নাম কুইন স্যানিটারি মার্কেট। এর বেজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর নিচতলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল। ২০০১ সালে গ্যাস সরবরাহের সংযোগস্থল থেকে তিতাসের মাধ্যমে লাইনটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সংযোগ লাইন অপসারণ করা হয়নি।

তারা আরও জানান, এছাড়া ওই ভবনের অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনও চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়ে গ্যাস লিক হয়ে বেজমেন্টের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো একটি কক্ষে জমে ছিল। সেখান থেকেই স্পার্কের মাধ্যমে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

এদিকে, তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই ভবনের বেজমেন্টে বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ থাকার কোনো সুযোগ নেই। তিতাসের একটি দল সেখানে কাজ করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিটিটিসি তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, ভবনটির বেজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে একসময় রান্নাঘর ছিল। বর্তমানে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামের একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি মালামাল বিক্রি করা হয় প্রায় ১৮০০ স্কয়ার ফুটের এ আন্ডারগ্রাউন্ডে, যার পুরোটাই গ্লাসে ঘেরা। বড় বড় দুটি এসিতে ঠান্ডা করা হয় এ স্যানিটারি দোকান। সেখানে বাতাস চলাচলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া সেখানে আছে একটি বড় পানির ট্যাংক।

তবে ভবনটির উত্তর পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়ঃবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংক, এসির আউটার ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ৭ তলা ভবনের কোথায় স্যুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত তা ভবনের মালিকরা নিশ্চিত নন। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর পাশের ভবনের সঙ্গে এ ভবনের যে আড়াই-তিন ফুট গলি আছে সেখানেই দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংক। ভবনের বেজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসাবাড়ির লোকজনের পয়ঃবর্জ্য যেখানে জমা হয় দীর্ঘ সময়, সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়োগ্যাসের জন্ম হতে পারে, যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে।

এদিকে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ঢাকা মহানগরীর সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেই আসল কারণ জানা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত বিস্ফোরক বা স্যাবোটাজের কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি বলেও পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে সিটিটিসি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh