লাশের অদলবদল, আটকে গেল দাফন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৩ এএম

আফছর মিয়া। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

আফছর মিয়া। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সাজানো গাড়ি কিংবা ভিন্ন কোনো আয়োজনে নয় কফিনে আসবে মৃত প্রিয়জনের লাশ। শেষ বারের মত প্রিয়জনের লাশ দেখার জন্য বাড়ি ভর্তি শোকাহত স্বজনরা। পাড়া ও পাশ্ববর্তী এলাকার মসজিদে ঘোষণা করা হয়েছে জানাজার নামাজের সময়সূচি। দাফনের জন্য গোরস্তানে কবর খোঁড়াও হয় আর লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত খাটিয়া। কিন্তু যে ব্যক্তির জন্য এমন শোকাবহ আয়োজন করেছিল পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা সেই আফছর মিয়ার (৪১) লাশ কফিনে আসেনি।

লাশ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নামানোর পর বাধে বিপত্তি, কফিনে এসেছে অপরিচিত মানুষের লাশ। ফলে সম্পন্ন হয়নি জানাজার নামাজ ও দাফন।  

এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের দামোধরতপী গ্রামে। 

আফছর মিয়া (৪১) ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮তারিখে লিভার ক্যান্সার জনিত কারণে গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এই গ্রামের মরহুম জমসিদ আলীর বড় ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, আফছর মিয়া গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মৃত্যুর সময় তার ভাই মোহাম্মদ এমরান মিয়াও সেখানে থাকায় মৃত্যুর চারদিন পর লাশ দেশে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনিও দেশে চলে আসেন। মারা যাওয়া আফছর মিয়ার সঙ্গে যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল সে ঠিকানায় গত শুক্রবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে ৩টায় মরদেহ নিয়ে লাশবাহী গাড়িও এসেছে। লাশ পেয়ে আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু লাশ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নামানোর পর বাধে বিপত্তি। এ লাশ যে আফছর মিয়ার নয়। পৌঁছেছে জালাল মিয়া (৫২) নামের এক ব্যক্তির। যার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলনপুর গ্রামের বাবা শফিক উদ্দিনের ছেলে। তিনিও গ্রিস প্রবাসী ছিলেন। আগামী ১৩ মার্চ তার লাশ দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু ভুলবশত আফছর মিয়ার নাম লেখা স্টিকারটি জালাল মিয়ার কফিনে লাগিয়ে দেয়ার কারণে ঠিকানায় তারিখ পরিবর্তিত হয়ে চলে আসে। আফছর মিয়ার লাশ এখনো গ্রিসের এথেন্সে আছে। আগামী ১৩ মার্চ জালাল মিয়ার ফ্লাইটে তার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

আফছর মিয়ার ভাগ্নে তোফায়েল আহমদ জানান, আমি ১০ মার্চ দিনের বেলা ঢাকা এয়ারপোর্টে যাই বড় মামার লাশ রিসিভ করতে। সেখানে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে রাত সাড়ে ৩টায় বাড়ি পৌঁছাই। এর মধ্যেই মাইকে জানানো হয় যে জানাজার নামাজ কখন হবে। ভোর থেকে গোরস্থানে করব খুঁড়া হয়। সকাল ১০টায় যখন লাশবাহী গাড়ি থেকে লাশ নামিয়ে কফিন খোলা হয় তখন দেখা যায় লাশ আমার মামার নয়। তারপর পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে খুঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, লাশটি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির। তার নাম জালাল মিয়া।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী জানান, কফিনে যার লাশ আসার কথা ছিল তার আসেনি। খবর পেয়ে ফোর্সসহ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যাই। পরে অনেক চেষ্টা করে মরহুম জালাল উদ্দিনের ঠিকানা বের করি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ লাশ হস্তান্তর করা হবে। জালালের মরদেহ সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। তার আত্মীয় স্বজনদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সেখানে যেতে বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। 

এদিকে আগামী ১৩ তারিখে দামোধরতপী গ্রামের মরহুম আফছর মিয়ার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে। ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh