দলিল লেখক সমিতির হাতে জিম্মি সাধারণ মানুষ

পুঠিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম

পুঠিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিস। ছবি: পুঠিয়া প্রতিনিধি

পুঠিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিস। ছবি: পুঠিয়া প্রতিনিধি

রাজশাহীর পুঠিয়ায় দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা দলিল লিখতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা নেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, দলিল লেখক সমিতি ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে সাধারণ মানুষ এখন জিম্মি। তারা দলিল করার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার কার্যক্রম চলে। এর জন্য লেখকদের দলিলপ্রতি সরকার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারি নিয়মানুযায়ী ইউনিয়ন এলাকায় এক লাখ টাকার দলিলে বিভিন্ন ফি বাবদ খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার এবং পৌর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। তবে দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা ক্রেতাদের জিম্মি করে প্রতি লাখে আদায় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

গত বৃহস্পতিবার সাবরেজিস্ট্রি দপ্তরে কথা হয় সৈয়দ আলী নামের একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে দলিল লেখকেরা সমিতির নামে সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছে। চক্রটি নানা অজুহাতে জমি ক্রেতাদের মোটা অঙ্কের অর্থ লুট করছেন। সমিতির মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দুই থেকে তিনগুণ। আর সমিতির বাইরে আছেন দুজন দলিল লেখক। তাদের মাধ্যমে করলে খচর অনেক কম হয়।

রাজিবুল ইসলাম নামের অপর একজন জমি ক্রেতা বলেন, সমিতির সঙ্গে সাব রেজিস্ট্রারের নামে আলাদা টাকা দিতে হয়। এর পর কাগজপত্রে যদি শব্দগত দুই একটি ভুল হয় তবে দলিল প্রতি সাব রেজিস্ট্রার ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আলাদা দিতে হয়। আর টাকা দিতে না চাইলে ওই দলিল আর গ্রহণ হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখক সমিতির দুজন সদস্য বলেন, খাতা কলমে সমিতিতে ২০৬ জন থাকলেও বর্তমানে ১৫৪ জন সদস্য রয়েছে। আর সমিতির বাইরে আছে আরো দুজন। হাতে গোনা ৪০-৪৫ জন সদস্য নিয়মিত দলিল লেখেন। আর যা আয় হয় তা সকল সদস্যরা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নেয়। এর একটা অংশ সাব রেজিস্ট্রারকেও দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন জমি রেজিস্ট্রি হয়। দুইদিনে গড় ১৮০ থেকে ২৫০টি দলিল তৈরি হয়।

এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মতিন মুকুল বলেন, সমিতির বিষয়ে অভিযোগ ঠিক না। এত বেশি টাকা দলিল লেখকেরা আয় করতে পারেন না। তারা অন্যান্য উপজেলার মতোই টাকা নিয়ে থাকেন। 

কাজ না করেও ভাগ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা সংসার চালাতে পারেন না। তাদের মাসে কিছু টাকা ভাতা দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত সাবরেজিস্ট্রার তানিয়া তাহের বলেন, আমাদের দপ্তরের ভেতরে কোনো অনিয়ম নেই। আর দলিল লেখকদের অনিয়মের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। তবে দলিল লেখক ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কীভাবে চুক্তি করছেন তা আমার জানা নেই। অনেক জায়গায় চাকরি করেছি, তবে অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানে সিন্ডিকেট চক্রটি একটু জটিল।

দলিল প্রতি ১ হাজার ৫০০ ও দলিলে শব্দগত কিছু জটিলতার অজুহাতে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, দপ্তরে নগদ সরকারি কিছু ফি জমা নেওয়ার বিধান আছে। আর অফিসে কয়েকজন কাজ করেন, যাদের সরকারিভাবে বেতন দেওয়া হয় না। কাজ শেষে অতিরিক্ত যে অর্থ বেশি হয়, তা মাস শেষে তাদের কিছু দিতে হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh