পঞ্চগড়ে মেয়েকে আছড়ে হত্যা, বাবার মৃত্যুদণ্ড

পঞ্চগড়ে ৬ মাস বয়সী কন্যা শিশুকে আছড়ে হত্যা এবং অপর দুই কন্যাসহ স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করার মামলায় নাজিমুল হক (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়।

আজ সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান এ দণ্ডাদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত নাজিমুল পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের শিংরোড জয়ধ্বরভাঙা এলাকার জয়নুল হকের ছেলে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, গত ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানায় নাজিমুল হককে প্রধান করে মোট তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন রশিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। পরে ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে অপর দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন করা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ মধ্যরাতে নাজিমুল তার স্ত্রী রশিদা আক্তারের সঙ্গে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রশিদাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ দৃশ্য দেখে ৮ বছর বয়সী মেয়ে নাজিরা এবং ৫ বছর বয়সী মেয়ে রিয়ামনি এগিয়ে এলে তাদেরকেও আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এসময় ৬ মাস বয়সী শিশু রত্না কান্না করতে থাকলে তাকে কোলে তুলে আছড়ে হত্যা করে পালিয়ে যান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি নাজিমুল হকের সঙ্গে মামলার বাদী রশিদুল ইসলামের মেয়ে রশিদার বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্যে একে একে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে সন্তান না হওয়ায় নাজিমুল তার স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে একাধিকবার শালিস মীমাংসাও হয়েছে। সবশেষে ঘটনার ৬ মাস আগে আবারো মেয়ে সন্তানের জন্ম হলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।

মামলার বাদী রশিদুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে ও নাতনীদের চিকিৎসা এবং মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি ন্যায় বিচার পেতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা। আমার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এখন রায় কার্যকরের অপেক্ষা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত এই দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক বহাল রাখা সাপেক্ষে দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হবে। তবে আসামি আইনে নির্ধারিত ৭ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের করতে পারবে বলেও জানান তিনি।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব বলেন, আসামি খালাস পাবার হকদার ছিল। আমরা আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করবো। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।