প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৩ পিএম

সম্পাদকীয়। ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়। ফাইল ছবি

সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার অধীনে গৃহীত প্রকল্পগুলোর সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের নামে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি এখন নিত্যকার ঘটনা। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় প্রতিটি স্তরে দুর্বল পরিকল্পনা, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতায় নির্ধারিত সময় ও ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখন প্রায় অসম্ভব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে কাগজে-কলমে জনস্বার্থের কথা বলা হলেও বাস্তবে বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষাই মুখ্য। বারবার সময় ও ব্যয় বাড়ানোর ফলে একদিকে যেমন জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, পাশাপাশি তাদের কষ্টার্জিত করের টাকারও অপচয় হচ্ছে।

গত অর্থবছরে দেশের প্রায় ১০১টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত কাজে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। এতে দেখা গেছে, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতিই হয়নি; কেবল কর্মীদের বেতন ও অফিস খরচ বাবদ অর্থ ব্যয় হয়েছে। ৬৯টি প্রকল্পে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশেরও কম। একইভাবে ৯৯টি প্রকল্পে অগ্রগতি রয়েছে ২৬ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে এবং আরও ২০৮টি প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ; যদিও এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখনো সন্তোষজনক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বহীনতায় নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে তিন শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতার কারণে সময় বাড়ানো হয়নি। শেষ হয়েছে এমন প্রকল্পের ব্যাপারে ঘোষণাও দেওয়া হয়নি। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনের সময় প্রকল্পগুলোর অনুকূলে অর্থছাড় বা ব্যয় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির নেপথ্যের কারণগুলো বারবার আলোচনায় এলেও সেসবের সমাধান হচ্ছে না। কোনো প্রকল্পের কাজ চলছে ১৩, কোনোটি ১২, কোনোটি ১১, কোনোটি আবার ১০ বছর ধরে। অথচ এসব প্রকল্প দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।

এসব প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। বছরের পর বছর ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির এই পুনরাবৃত্তি মেনে নেওয়া যায় না। দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার এই চক্র থেকে বের হতে হবে। কেন এ ধরনের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি হয় সেটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে এবং এসব সমস্যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

এছাড়া যাদের কারণে প্রকল্পের ধীরগতি সংশ্লিষ্ট সেই দায়িত্বপ্রাপ্তদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মোটকথা সংশ্লিষ্টদের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh