পাকিস্তানের বিচারের দাবিতে সুইজার‌ল্যান্ডে পোস্টার প্রতিবাদ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৪:২১ পিএম

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের পোস্টার প্রতিবাদ। ছবি- সংগৃহীত

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের পোস্টার প্রতিবাদ। ছবি- সংগৃহীত

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের চালানো হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ স্বীকৃতি দেওয়া ও ওই সময়ে দেশটির ভূমিকার বিচারের দাবিতে পোস্টার প্রতিবাদ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেকুলার বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ড শাখা।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৭ মার্চ) জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনের সামনের ব্রোকেন চেয়ার স্কোয়ারে সুইজারল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে এ প্রতিবাদ জানায়।

এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই।

আয়োজকরা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল ’৭১ সালে, তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে। এ বছরই স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্ণ করবে বাংলাদেশ। ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশের দাবি, আন্তর্জাতিক বিশ্ব যেন ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় নিরীহ লোকজনের ওপর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ার পর ওই রাতেই বেতারে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এই ঘোষণার পরপরই তাকে  গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী।

৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী।

এই নয় মাসে পুরো বাংলাদেশে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ২ লাখ নারী।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে গত কয়েক বছর ধরে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পরিচালিত হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই স্বীকৃতি যদি আদায় সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানের বিচার চাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হবে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের মাত্র এক বছর পরেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা যান। ফলে পাকিস্তান জন্মের মূল যে উদ্দেশ্যগুলো ছিল তা আর পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে নি।

জাতিগত পাঞ্জাবিরা নতুন রাজ্যে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে এবং দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একচেটিয়া ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে, পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণ স্পষ্ট হয়ে উঠে। মূলত পাকিস্তানিদের এই বৈষম্যমূলক আচরণই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর দেরি না করে তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

তবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের বলেছিলেন অন্ততপক্ষে ৩০ লক্ষ বাঙালিদের হত্যা করতে যাতে বাকিরা খুব সহজেই পাকিস্তানের কাছে নিজেদের হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

ব্রোকেন চেয়ার ভাস্কর্যটি একদিকে যেমন ভঙ্গুরতার প্রতীক, অপরদিকে তেমনই শক্তির প্রতীক। এটি একইসাথে ভারসাম্যহীনতা ও স্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা ও মর্যাদার প্রতীক।

পূর্বে হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল নামে পরিচিত, হিউম্যানিটি এন্ড ইনক্লুশন এর অনুরোধে ১৯৯৭ সালে প্রখ্যাত ভাস্কর ড্যানিয়েল বেরসেট এই ব্রোকেন চেয়ার হল ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে প্লেস ডেস নেশনসে ৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ভাস্কর্যটি ভাঙা চেয়ারের তিনটি পায়ের উপর ভারসাম্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং চেয়ারের চতুর্থ পা টি যেন কোন হামলায় নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

এই চতুর্থ পা, যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের প্রতিচ্ছবি। নষ্ট হয়ে যাওয়া চতুর্থ পা যেমন অন্য তিন পায়ের সাথে ভাস্কর্যে সমান গুরুত্ব পেয়েছে, ঠিক তেমনি যুদ্ধাহত যোদ্ধারাও পদমর্যাদায় বাকি সবার সমান, এই ভাস্কর্যটি আমাদের এই শিক্ষাই দেয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh