পুতিনকে কি আদৌ গ্রেপ্তার করা সম্ভব

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৭ পিএম

ইউক্রেন যুদ্ধে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন পুতিন। এমন সিদ্ধান্তে নিয়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে আইসিসি। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন পুতিন। এমন সিদ্ধান্তে নিয়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে আইসিসি। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাত থেকেই গোটা বিশ্বেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবর। এই আদেশে ক্রেমলিন পাত্তা না দিলেও স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

ইউক্রেন যুদ্ধে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন পুতিন। এমন সিদ্ধান্তে নিয়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে আইসিসি। কিন্তু আসলেই কি পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব, এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। আপাতত এই আলোচনায় সরগরম গোটা দুনিয়া। 

সবার সাধারণ জিজ্ঞাসা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি কিভাবে তার আসামিকে ধরে আনতে। ক্রেমলিনের প্রাসাদ থেকে আদৌ কি পুতিনকে গ্রেপ্তার করে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে? এসবই এখন বড় প্রশ্ন। 

পুতিনকে গ্রেপ্তার করা যাবে কি যাবে না, এনিয়ে পশ্চিমারা কোন কথা না বললেও, আইসিসি আদেশে উদ্বেলিত মার্কিন নেতা বাইডেন। শনিবার তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের মোকাবেলায় আইসিসি সঠিক পদক্ষেপ করেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধে পুতিনের ভূমিকা রয়েছে।

পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি বলেছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চল থেকে শিশুদের জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে রুশ সেনা। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। একই অভিযোগে রুশ কর্মকর্তা লভোভা বেলোভার। তাই দুই জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। 

ঘটনাচক্রে, আমেরিকা বা রাশিয়া কোনও দেশই আইসিসির সদস্য নয়। সে কথা জানিয়ে মস্কোর দাবি, পরোয়ানার কোনও গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। রুশ মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভা তো জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়া এই আদালতের বিচারের আওতায় পড়ে না। তাই এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। 

ইউক্রেনের শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পুতিনের বিরুদ্ধে আনা হলেও দেশটি নিজেও আইসিসির সদস্য নয়। রাশিয়া তো নয়ই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুতিনের বিরুদ্ধে যতই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক, নিজের দেশে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। 

যদিও আইসিসির অন্তর্ভুক্ত ১২৩টি দেশের যে কোনও দেশে পুতিন গেলেই তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন। খাতায় কলমে তেমন সম্ভাবনা নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু আইসিসির নিজস্ব কোনও পুলিশ বাহিনী না থাকায় পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে হবে সেই দেশগুলোর পুলিশকেই। যা সচরাচর দেখা যায় না। পুতিন একটি রাষ্ট্রের প্রধান। কূটনৈতিক দিক দিয়ে দেখলে তিনি কোন দেশে সফর করলে তাকে সেই দেশের পুলিশের পক্ষে গ্রেপ্তার করা তাই কার্যত অসম্ভব। শুধু কি তাই, কোন দেশ সফরের আগে রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সেখানে যান।

এ প্রসঙ্গে বলা যায় সুদানের সাবেক নেতা ওমর আল-বাশিরের কথা। তিনি আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও আইসিসিরই সদস্য দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জর্ডন সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রেপ্তার হননি আদৌ। কারণ তিনি দেশ দুটোর অতিথি হিসাবে সফরে গিয়েছিলেন।

২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পর কেটে গিয়েছে তিন বছরেরও বেশি সময়। সুদান তাকে আইসিসির হাতে তুলে দেয়নি আজও। পুতিন আরও বেশি প্রভাবশালী নেতা। তাই তিনি কোনও দেশে গেলে সেখানকার প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ নেবে বলে মনে হয় না।

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান এক বছর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রুশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেশটির শিশুবিষয়ক কমিশনার বেলোভা ইউক্রেনীয় শিশু নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন। 

ইউক্রেনীয় শিশুদের দেশান্তর করার পর রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে তাদের দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, তা নিয়েই আলোচনা হয়। এরপরই সম্ভবত আইসিসি কৌঁসুলি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন বলে মনে করা হয়।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় শিশুদের ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধ ঘটেছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ইউক্রেন ১৬ হাজারের বেশি শিশুকে জোর করে রাশিয়ায় স্থানান্তরের অভিযোগ করেছে।

এরপরই আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিতে বিশ্বের একাংশ খুশি হলেও, রাশিয়া ও তাদের সমর্থনা পাত্তাও দেয়নি। এই আদেশের ফলে পুতিন একঘরে হবেন বলেও মনে করছে না কেউ। সোমবারই মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন চীনা নেতা শি জিনপিং। 

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব। তবে ভবিষ্যতে মস্কোয় ক্ষমতার পালাবদল হলে ভ্লাদিমির পুতিনকে আইসিসির কাছে হস্তান্তরের ঝুঁকি তার সামনে থাকছেই। সেদিক থেকে পরোয়ানার একটি তাৎপর্য আছে। 

আইসিসির আদেশের পরিণতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পশ্চিমা কোনো দেশে ভ্রমণ হয়তো সম্ভব হবে না। যদিও পুতিন সেসব যেতে চান কিনা সেটাও একটি বড় প্রশ্ন। তবে রোম সনদে সই না করলেও যে কোনো দেশের সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি নিয়ে পরোয়ানা জারি কিংবা বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে আইসিসি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh