কক্সবাজার সরকারি কলেজে হীরকজয়ন্তীতে প্রাণের উচ্ছ্বাস

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩৬ পিএম

হীরকজয়ন্তী উৎসব। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

হীরকজয়ন্তী উৎসব। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসবে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বসেছে মিলনমেলা। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। গতকাল শনিবার (১৮ মার্চ) দিনভর কলেজ প্রাঙ্গণে চলে কৌশল বিনিময়ের পালা। 

মাত্র ১৩ জন ছাত্র নিয়ে ১৯৬২ সালে শুরু হয়েছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারি কলেজের যাত্রা। সেই যাত্রার ৬০ বছর পূর্তির হীরকজয়ন্তী উদযাপনে যোগ দিতে ছুটে এসেছেন প্রাক্তন-বর্তমান দশ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কেউ ছুটে এসেছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে, কেউ রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীর কর্মস্থল থেকে। অনেকে আবার ছুটে এসেছেন সৌদি আরব, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জার্মানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিশাল মাঠে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। সবাই ব্যস্ত টি-শার্ট, খাবারের কুপনসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী সংগ্রহে।

সকাল ১০টার মধ্যে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস কানায় কানায় পূর্ণ হয়।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির আহমদ চৌধুরী বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠার পর গত ৬০ বছরে এ ধরনের আয়োজন আর হয়নি। উৎসবে এসে নতুন-পুরনো সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কুশল বিনিময় হচ্ছে, কে কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন -খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দিনটা সবার মনে থাকবে। আমার স্ত্রী, ছেলে সকলে এ প্রতিষ্ঠানে পড়েছি। তাই আমরা সবাই এসেছি প্রিয় কলেজ প্রাঙ্গনে।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার।  

কক্সবাজার শহরে প্রবেশের মুখে লিংক রোড এলাকায় ১৮ দশমিক ৯২ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। ১৯৬৬ সালে কলেজে ডিগ্রি পর্যায়ে কলা ও বাণিজ্য এবং ১৯৭০ সালে বিজ্ঞান চালু হয়। ১৯৯৭ সালে চালু হয় বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও গণিত-এই ১৩টি বিষয়ে স্নাতক ও ছয়টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স। পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা কোর্স চালু আছে। ১৯৮০ সালের ১ মার্চ জাতীয়করণ হওয়া এই কলেজটি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির ফলাফলে সেরা ১০টি কলেজের একটি। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে পড়ছেন প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী।

বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্ত আলোচনা ও স্মৃতিচারণা। পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। হীরকজয়ন্তীর এই আয়োজন ইতিহাস হয়ে থাকবে মন্তব্য করে শিরীণ আখতার বলেন, ‘আজ হলো গ্রহণের দিন, মতবিনিময়ের দিন। হীরকজয়ন্তীতে আমরা সবাই মিলেমিশে আনন্দ-উল্লাসে দিনটিকে স্মৃতিময় করে রাখতে চাই।’ 

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় স্মৃতিচারণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একাত্তরে জয় বাংলা বাহিনীর প্রধান কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল করিম, বর্তমান অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন, প্রাক্তন ছাত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, সিনিয়র আইনজীবী নুরুল ইসলাম, আইনজীবী তাপস রক্ষিত, ছাত্রনেতা নুরুল আজিম কনক প্রমুখ।

হীরকজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে নাচে-গানে মঞ্চ মাতান স্থানীয় শিল্পীরা। জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন উখিয়ার বাসিন্দা ফজলুল করিম। এর মধ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে শিক্ষকতা করেছেন ৩২ বছর। 

কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল করিম বলেন, ১৯৬৫ সালে তিনি ছাত্র হিসেবে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৭৩ সালে। এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ছিলেন অধ্যক্ষ। এরপর অবসর নেন তিনি।

বেলা ১টার দিকে মুক্তমঞ্চে চলছিল রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণীদের নৃত্যগান। অন্যদিকে বিশাল প্যান্ডেলে একসঙ্গে দুই হাজার মানুষের মেজবানি খাবারের আয়োজন। সন্ধ্যায় আবারো একে অপরকে খুঁজে খুঁজে বের করে বিদায় নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে চলে যান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh