তারুণ্যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০:১১ এএম

নতুন দিনের বার্তা দিচ্ছে সাকিব, তামিমের দল। ছবি: সংগৃহীত

নতুন দিনের বার্তা দিচ্ছে সাকিব, তামিমের দল। ছবি: সংগৃহীত

মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে নিয়ে স্বপ্নের একটা দল ছিল বাংলাদেশের। অনেকের ধারণা ছিল এই পাঁচজনের পর বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সংকটটা তৈরিও হয়েছিল। তবে সেখান থেকে বের হতে পেরেছে বাংলাদেশ। বলা যায় একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খেলাটি। 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে পাওয়া জয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে। সেখানে নেতৃত্বে রয়েছেন তরুণ তুর্কিরা। তারুণ্যে ভবিষ্যতের জন্য বড় স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে পঞ্চ পাণ্ডবের ছায়া থেকে বের হতে টানা দুই সিরিজে দারুণ ক্রিকেট খেলছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ঘুরে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়াম হয়ে এখন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।

টানা পাঁচ ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়ে নতুন দিনের বার্তা দিচ্ছে সাকিব, তামিমের দল। এই সময়ে বেশ কয়েকজন তরুণ নিজেদেরকে প্রমাণে পাস মার্ক পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে মার্ক উডকে নাজমুল হোসেন শান্তর টানা চারটি চার, হাসান মাহমুদের ভয়ংকর ইয়র্কারে জস বাটলারের অসহায় আত্মসমর্পণ, আদিল রশিদের গুগলিকে মামুলি বানিয়ে তৌহিদ হৃদয়ের ছক্কা কিংবা কাভার থেকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বাটলারকে মেহেদী হাসান মিরাজের রানআউট-সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারুণ্যে গড়া সাকিবরা ছিলেন এককথায় দুর্বার। 

মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে এর আগেও বহুবার বড় দলগুলোকে হারানোর উৎসবে মেতেছিল টাইগাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় এই আর এমন কী? অন্য অনেক জয় থেকে, অনেক সিরিজ থেকে এই জয় টি-টোয়েন্টির ধূসর ইতিহাসে রঙিন আর ঝলমলে হয়ে থাকবে। চনমনে মনোভাব থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট, ভয়ডরহীন, হার না মানা মানসিকতা সবকিছুই দেখা গেছে বাইশ গজে। সেখানে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে আসা চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অবদানকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

তরুণ ক্রিকেটারদের নিজের মতো করে খেলার যে স্বাধীনতা তিনি দিয়েছেন তাতেই মিলেছে সাফল্যের টোটকা। কারণ এই কোচ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেনেন হাতের তালুর মতো করে। যার মধ্যে দলের নবীনতম সদস্য থেকে শুরু করে দেড় যুগ ধরে খেলা ক্রিকেটার, সবাই যেন ছিলেন একই সূত্রে গাঁথা।

রাসেল ডোমিঙ্গো জামানায় অধিনায়ক বদলেছে, প্রধান কোচকে বিশ্রাম দিয়ে উড়িয়ে আনা হয়েছিল টি-টোয়েন্টির জন্য বিশেষজ্ঞ কোচ; কিন্তু একটা জিনিসই বদলায়নি সেটি ২২ গজের পারফরম্যান্স। এবার সেটি দেখা মেলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেটে। সে কারণেই বলা যায় এই সিরিজ যেন টি-টোয়েন্টিতে নবযুগের ইঙ্গিত। ক্রিকেটারদের অ্যাপ্রোচের ভিন্নতাই বলে দিচ্ছে মাঠের পারফরম্যান্স।

এই সিরিজে দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান নাজমুল হোসেন শান্তর (১৪৪), সর্বোচ্চ উইকেট যৌথভাবে মেহেদী হাসান মিরাজ-তাসকিন আহমেদ (৪), সর্বোচ্চ ডিসমিসাল লিটন দাশের (৫) এবং সর্বোচ্চ ক্যাচও শান্তর (৪)। তারা সবাই তারুণ্যের প্রতিনিধি। দেশের মাঠে খেলা মানেই নিয়মিতভাবে স্পিন উইকেট। বিপিএলের পর এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মরা উইকেটের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে অনেক বদনাম ঘুচিয়েছে। তবু বাড়তি কিছু সহায়তা ছিল স্পিনারদের।

আর এক সিরিজেই বদলে গেছে বাংলাদেশের ফিল্ডিং। লিটনের দারুণ স্টাম্পিংয়ের পাশাপাশি মিরাজের চোখ জুড়ানো রান আউট। এ বিষয়গুলোই প্রমাণ করে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দলের উন্নতি। বাংলাদেশের ফিল্ডিং মিসের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই চলছে একের পর এক সমালোচনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে এসে বদলেছে ফিল্ডিংয়ের পরিস্থিতি।

সেই চেষ্টাটা দেখা গেছে তরুণদের মধ্যেও। শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে একটি ক্যাচও মিস করেনি বাংলাদেশ। এমনকি বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে দারুণ কিছু ফিল্ডিং করার দৃশ্য চোখে পড়েছিল। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছুর অপেক্ষা করাই যায়। অন্ততপক্ষে তরুণরা যখন দলের দায়িত্ব নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh