পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৪:৪৬ পিএম
মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করলেও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিরব। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি
অবৈধভাবে মাটি কেটে ব্যবসা চালাচ্ছেন স্থানীয় একটি মহল। প্রকাশ্যে এসব মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করলেও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিরব। এই অদৃশ্য শক্তির কারণে দিশাহারা ফসলি জমির মালিক, কৃষক ও নদী পাড়ের বসতীরা। অদৃশ্য শক্তির ভয়ে মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে সাহস পায় না।
এদিকে খননের কাদামাটি, কাঁচা-পাকা সড়কের ওপর দিয়ে বহন করার ফলে সড়কগুলো কাদায় পরিণত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের শাহানগর গ্রামে বড়াল নদীতে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে প্রকাশ্যে বড়াল নদী থেকে মাটি ও বালু কেটে নিয়ে বিক্রি করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন গংরা। নদীর পারে থাকা বসতীসহ ঐ এলাকার কোন লোকই আলাউদ্দিনের ভয়ে কাউকে কিছু বলতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বললে তার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের শাহানগর গ্রামে বড়াল নদীতে সারা রাত ধরে নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাক বোঝাই করে বিভিন্ন ইট ভাটায় নিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টমনিষা ইউনিয়নের শাহানগর গ্রামের চাঁদ আলী ওরফে চাঁদুর ছেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন তার নিজ ক্ষমতা দেখিয়ে নিজ নেতৃত্বে মাটি কেটে বিক্রি করছে বিভিন্ন ভাটায়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাটি কাটা বন্ধ করেন উপজেলা প্রশাসন। তার কিছু সময় পরেই আবার চালু হয় মাটি কাটা আর তা চলে সারা রাত ধরে।
স্থানীয় নাম বলতে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এই আলাউদ্দিনের জন্য রাতে বাসায় ঘুমিয়েও শান্তি নেই। দিন রাত দিয়ে মাটি তুলছে, কেউ বাধাও দিতে পারবে না। কিছু বললে তার দলবল নিয়ে এসে ধরে নিয়ে যাবে। এই মাটি কাটা বন্ধ যে কবে হবে তা আল্লা জানে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলাউদ্দিনের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে তার অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অনুমতি নেই। বেকার ছেলেদের চালানোর জন্য পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেলকে বলে আমরা এই মাটি কাটছি। কে আপনাদের বলেছে বলেন। আপনাকে যে অভিযোগ করেছে তাদেরকে সারা দিন ধরে পিটালেও দেখার লোক নেই।
পরে আলাউদ্দিনের সাথে আবার কথা হলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, আমি আপনাকে ভালোভাবে সব বলে দিলাম, এখন আমাকে অনেকে ফোন দিচ্ছে। আপনি ফোন দিয়েছেন কেন। এসে ঘুরে যান।
এ বিষয়ে জানতে অষ্টমনিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশিদুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাতেই মুঠো ফোনে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ওটা আমাদের কাজ না, আপনি উপজেলা প্রশাসনকে বলেন, বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল মুঠো ফোনে বলেন, আমি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। আর এ মাটি কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এখন কেউ যদি আমার নাম বলে তাহলে আমি কি করবো। তবে এসব আমি কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খানকে মুঠো ফোনে ফোন দিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শোনার পরপরই লোক পাঠিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। এর আগেও রাতে বন্ধ করা হয়েছে। তবে আর কাটতে পারবে না সেই ব্যবস্থা নিতে বলেছি।