‘দড়ি দিয়ে সবাইকে বেঁধে গুলি করে’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

পাড়ঘাট বধ্যভূমিতে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পাড়ঘাট বধ্যভূমিতে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পাড়ঘাট বধ্যভূমিতে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

আজ শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ১১টায় পাড়ঘাট বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ দেবীগঞ্জের নেতৃবৃন্দ, দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, দেবীগঞ্জ অলদিনি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা।

জানা যায়, উপজেলার পাড়ঘাট এলাকায় ১৯৭১ সালের ১ জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১১জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে।

দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের এই মানুষগুলো শরণার্থী হিসেবে ভারতে গেলেও দেশের টানে ১৪-১৫দিন পরেই ফিরে আসেন। আসার পথে নারী পুরুষ পরিবার পরিজনসহ রাজাকার তাদের আটক করে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেন। হানাদার বাহিনী ও রাজাকার মিলে নারী এবং শিশুদের উপরে নির্যাতন করে। নারী ও শিশুদের ছেড়ে দিলেও তারা পুরুষ মানুষদের ছাড়েনি। হানাদারেরা পুরুষ মানুষগুলোকে হত্যা করার উদ্দেশ্য দড়ি দিয়ে বেধে নিরবচ্ছিন্ন গুলি বর্ষণ করেন। এতে ঘটনাস্থলেই ১১জন শহীদ হয় এবং সৌভাগ্যবশত একজন প্রাণে বেঁচে যান।

নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা ৯০ বছর বয়সী কলিন্দ্র নাথ জানান, সেদিন (১ জুন) দেশের টানে তারা ভারত থেকে ফিরছিলেন, কিন্তু সকাল আনুমানিক দশটার দিকে দেবীগঞ্জ করতোয়া নদীর পশ্চিম পাড়ে রাজাকারেরা তাদের ধরে ফেলে। সারাদিন হাত-পা বেধে নির্যাতন করার পরে বিকালে তারা পাক সেনাদের হাতে তুলে দেয়। পাক সেনারা তখন পুরুষ মানুষগুলোকে একই দড়ি দিয়ে সবাইকে বেঁধে গুলি করে। এতে সকলের মৃত্যু হলেও তিনি বেঁচে যান।

তিনি বলেন, হানাদার চলে যাবার পর স্থানীয় রাজাকার নিহতদের লাশ বালুচাপা দেয়। কিন্তু বালুচাপা দেওয়ার আগেই তিনি কোনমতে পাশের একটি হিন্দু বাড়িতে আশ্রয় নেই। 

বঙ্গবন্ধু পরিষদ দেবীগঞ্জ উপজেলার সভাপতি নাসির উদ্দীন চৌধুরী জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদদের স্মৃতিগুলো নতুন প্রজন্মের তুলে ধরা আমাদের কর্তব্য। সেজন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাড়ঘাট বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করি এবং প্রতি বছর বিশেষ দিনগুলোতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস বলেন, পাড়ঘাট বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের কর্মসূচি শুরু করেছি আমরা। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জাতির জনকের প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে, রাত ১০.৩০ মিনিট থেকে ১০.৩১ মিনিট পর্যন্ত  সারাদেশের ন্যায় প্রতীকী ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh