জোসে মারিয়া সিসন
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
জোসে মারিয়া সিসন ফিলিপাইনের একজন কবি, লেখক ও সক্রিয় কর্মী। জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯, ফিলিপাইনের কেবুগাউ শহরে। ফিলিপাইনের একজন সর্বহারা-আন্তর্জাতিকতাবাদী মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ও মাওবাদী নেতা এবং তাত্ত্বিক হিসেবেও সুপরিচিত। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অব ফিলিপাইনস ও নিউ পিপলস আর্মির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৬ সালে কবিতার জন্যে South Ashia WRITE পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ নেদারল্যান্ডসে মারা যান তিনি। ভাষান্তর : দিলারা রিঙকি
গেরিলা একজন কবির মতোই
গেরিলা একজন কবির মতোই
শুকনো ডাল ভাঙার শব্দ
পাতার মর্মর
নদীর ঢেউ
আগুনের গন্ধ
আর প্রস্থানের ছাই
সে সৃষ্টি করতে জানে।
গেরিলা একজন কবির মতোই
গাছেদের সাথে
ঝোপঝাড় আর শিলাপাথরের সাথে মিশে থেকে
শত্রুকে ফেলে দেয় দ্বিধায়
নিজে থাকে নির্ভুল
গতির বিদ্যা তার হাতের মুঠোয়
অসংখ্য স্বপ্নের কারিগর।
গেরিলা একজন কবির মতোই
প্রকৃতির ছন্দে সবুজে মিশে থাকে
ভেতরে নীরব, বাইরে নিষ্পাপ
শত্রুকে ফাঁদে ফেলতে
ইস্পাতের ন্যায় প্রসারণশীল।
গেরিলা একজন কবির মতোই
সবুজ-বাদামি নানা রং নিয়ে চলাফেরা
ঝোপঝাড়ে আগুনলাল ফুলের মুকুট
তাকে পরিয়ে দেয় সকল অভিভূত হৃদয়
বানের জলের মতো দলে দলে ধেয়ে আসে ভূখণ্ডের মানুষ
অবশেষে দুর্গের বিরুদ্ধে শুরু হয় কুচকাওয়াজ।
অবিরাম আন্দোলন, গণযুদ্ধ
লেখা হয় জনগণের এক অজেয়
মহাকাব্য।
বৃষ্টি আসছে
ভ্যাপসা গরম অসহ্য জট পাকাচ্ছে
ঘনকালো মেঘে ঢেকে যায় সব
এরই মধ্যে বিদ্যুৎ চমকানো গর্জন
ঘোষণা দেয় নতুন এক ঋতুর।
তুমুল তুফানের ঝড়ো হাওয়া
পর্বত থেকে পর্বতে ধাক্কা খেয়ে
আরও অন্তরঙ্গ বার্তা পাঠায়,
বৃষ্টি আসছে সমতলে।
গাছেরা ডানা মেলে দেয় আকাশে
নেচে ওঠে প্রফুল্ল মন।
গান আর হাসিতে গাছেদের সাথে
বৃষ্টির শব্দেরা হারিয়ে যাবে ঝোপে।
ঝরাপাতা উড়ে যাবে বাতাসে
নাড়াক্ষেতে আগুনের ফুলকি।
অগ্নিশিখা ঝাঁপিয়ে পড়ে আর তৃষ্ণা মেটাতে
জলের জন্যে পৃথিবী কী যে উদগ্রীব!
আমার জীবনের ধাপগুলো
আমার জীবনের ধাপগুলো
যদি চিহ্নিত করতে চাও
সাধারণ একটা গল্প
খুব সহজে পড়ে নিতে পারো
আমার জীবনের বসন্তে
আমার চারপাশে, মেহনতি
মানুষের কষ্ট আমি দেখেছি
তখন আমার মন অবশ্য অন্যত্র ছিল
আমার জীবনের গ্রীষ্মে
শোষকের বিরুদ্ধে
লড়াইয়ে একাত্ম হয়ে
নিজেকে জ্বালিয়েছি, পুড়িয়েছি
আমার জীবনের শরতে
উর্বর ভূমিতে
গণমানুষের বিচরণ আর
ছিল তাদের অগ্রগতি
আমার জীবনের শীতে
মাঠের খড়কুটো জড়িয়ে উষ্ণ থেকেছি
আমি নিশ্চিত
বিজয় মানুষের হবেই।
অন্ধকার খুঁড়ে খুঁড়ে
শত্রু আমাদের কবর দিতে চায়
কারাগারে, অতল অন্ধকারে
সে জানে না ভূপৃষ্ঠের অতল থেকেই
বেরিয়ে আসে জ্বলজ্বলে সোনা
অতল সমুদ্র থেকেই ডুবুরি তুলে আনে
উজ্জ্বল মুক্তাদানা।
এই যে সুদীর্ঘ সংগ্রাম
অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে গড়ে ওঠা চারিত্রিক দৃঢ়তা
আমরা তো অন্ধকার খুঁড়ে খুঁড়েই
তুলে আনি সোনা আর মুক্তাদানা।