ক্রিকেটেও অচেনা মোহামেডান

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৩৮ পিএম

মোহামেডানের কর্মকর্তাদের সাথে সাকিব আল হাসান ও অন্যান্য খেলোয়াড়রা। ছবি: সংগৃহীত

মোহামেডানের কর্মকর্তাদের সাথে সাকিব আল হাসান ও অন্যান্য খেলোয়াড়রা। ছবি: সংগৃহীত

এক যুগের বেশি সময় আগে দেশে পেশাদার ফুটবলের প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকেই যেন উল্টোরথে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। প্রথম তিন আসরে রানার্সআপ হলেও পরে আর সেই অবস্থায় পাওয়া যায়নি দলটিকে।

ফুটবলে শিরোপার স্বাদ ভুলে যাওয়া মোহামেডান যেন ক্রিকেটে একই অবস্থায় রয়েছে। এবার তো টানা পরাজয়ে সুপার সিক্সে খেলাটাই অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে। যদিও তারকাসমৃদ্ধ দলটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমর্থকরাও। 

টানা দ্বিতীয় মৌসুমে দলটিতে খেলছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। লিগ শুরু হয়ে গেলেও আয়ারল্যান্ড সিরিজের ব্যস্ততার কারণে প্রথম ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন ১ এপ্রিল। যদিও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন এই অলরাউন্ডার, তবু শেখ জামালের বিপক্ষে ২২ রানের জয় আসে প্রথমবার। 

অথচ এবার গতবারের মতো দলই গঠন করে মতিঝিলের ক্লাবটি। সাকিবের সঙ্গে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, শুভাগত হোম, নাজমুল ইসলাম অপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ আশরাফুল, সৌম্য সরকার, রনি তালুকদারের মতো তারকা ক্রিকেটাররাও পারছেন না কিছুই করতে।

এবার দলে নেতৃত্বে রয়েছেন ইমরুল। মূলত বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাফল্যের কারণেই সাকিব নিজেই তার হাতে নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছেন। অথচ ভালো দল গড়েও গত মৌসুমে মোহামেডান সুপার লিগে উঠতে পারেনি। 

সেবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততার জন্য একটি ম্যাচও খেলা হয়নি সাকিবের। এবার জাতীয় দলের ম্যাচ পাশাপাশি আইপিএল থাকার পরও মোহামেডানের সব ম্যাচ খেলার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু খুব বেশি ম্যাচ যে খেলতে পারবেন না এটা একরকম নিশ্চিত। 

গত মৌসুমে সুপার লিগের আগে বাদ পড়ে মোহামেডান। এছাড়া জাতীয় দলের কমিটমেন্টের কারণে খেলতে পারেননি মুশফিক, মিরাজ, তাসকিনরা। তারা যখন ফ্রি হয়েছেন, ততক্ষণে মোহামেডানের বাদ পড়া নিশ্চিত হয়ে গেছে। এবারও সেই পথেই রয়েছে তারা। প্রিমিয়ার লিগে ঐতিহ্য‌বাহী মোহামেডানের অবস্থা এবারও খুবই নাজুক। শিরোপার জন‌্য দল গড়ে তারা এখন রয়েছে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে।

শেখ জামাল ম্যাচের আগে ৫ ম‌্যাচ খেলে দলটির অর্জন ছিল মাত্র এক পয়েন্ট। পয়েন্ট টেবিলে ১২ দলের মাঝে সবার নিচে ছিল তাদের অবস্থান। সেই এক পয়েন্ট এসেছে আবার বৃষ্টির কারণে রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ম‌্যাচ পরিত‌্যক্ত হলে। অবস্থা যা তাতে মোহামেডান যদি এবারও রেলিগেশন লিগ খেলে তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

এ অবস্থায় মোহামেডানকে উদ্ধার করতে আপাতত এগিয়ে আসেন সাকিব। তার সঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে খেলা রনি ও মিরাজও খেলা শুরু করেন। এই ম্যাচেই আসে প্রথম জয়। প্রতিপক্ষ শেখ জামাল আগে খেলা ম‌্যাচের সব কটিতে জিতে নেট রানরেটে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে। 

ঘরোয়া ক্রিকেটে কোটি টাকার প্রশ্ন, গতবারের মতো এবারও কি সেরা ৬ দলে জায়গা করে নিতে পারবে না সাদা-কালোরা? কাগজে-কলমে ঐতিহ্যবাহী দলটির চেহারা যেমনই দেখাক না কেন, বাস্তবতা বলছে ঢাকা তথা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় দলটি এবারের লিগে একেবারে তলানিতে। এখান থেকে সুপার লিগ খেলার সম্ভাবনা একরকম নেই বললেই চলে। বরং রেলিগেশন লিগ খেলার আশঙ্কাই বেশি।

ইতিহাস বলছে, ১৯৯৮ সালেও এমন অবস্থা হয়েছিল। সেই মৌসুমে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাসিবুল হোসেন শান্তসহ প্রায় সবাই মোহামেডান ছেড়ে অন্য দলে চলে গিয়েছিলেন। শুধু মোহাম্মদ রফিক আর সেলিম শাহেদ থাকায় টানা ৫ ম্যাচে হেরেছিল। সেবার লাইনআপই দুর্বল থাকলেও এবার ততটা খারাপ ছিল না। বছরের পর বছর ধরে ব্যর্থতায় কর্মকর্তাদের অপরিণামদর্শিতাই মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

মোহামেডানের চার ভাগের একভাগ বাজেটের দল গড়েও অগ্রণী ব্যাংক, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, সাইনপুকুর ও সিটি ক্লাবও আগেভাগে জয়ের মুখ দেখেছে। অথচ মোহামেডানকে ছয় ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। 

তারকায় ঠাসা একটি দল গঠন করায় অনভিজ্ঞদের দিয়ে শুরু থেকেই খেলাতে হচ্ছে। খালি চোখে মোহামেডানকে যত সমৃদ্ধ আসলে তারা ততটা নয়। ক্লাবের কর্মকর্তারা সাকিব, মিরাজ, রিয়াদ, সৌম্যদের নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার চেষ্টা করলেও মাঠের ফলে তার কোনো প্রভাবই পড়ছে না। কর্মকর্তারা দলের ভেতরের অবস্থা খুঁটিয়ে দেখেননি।

তারা যে দল গঠন করেছেন, সে দলটি যে ব্যালেন্সড নয়, ব্যাটিং ও বোলিংয়ে যে বহু ফাঁক-ফোকর আছে, সেটাও বিবেচনায় আনেননি। ক্রিকেটারদের বর্তমান ফর্ম, ফিটনেস এবং ভালো খেলার মতো মানসিকতাও ভেবে দেখা হয়নি। চলতি মৌসুম ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ঘরোয়া লিগের পরীক্ষিত পারফরমার আর দীর্ঘ সময় ধরে সার্ভিস দিতে পারা খেলোয়াড়দের দিয়ে দল গঠনের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাহলে অন্ততপক্ষে ঐতিহ্যটা বাঁচতে পারে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh