সিসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির আরিফুল

সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১১ পিএম

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট সিটির বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ছবি: ফাইল

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট সিটির বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ছবি: ফাইল

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ ব্যাপারে লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবুজ সংকেত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। 

নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। বিশেষ করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ডজন খানেক নেতা কৌশলে নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। নৌকা পেতে কেন্দ্রে লবিং তদবিরও রক্ষা করে চলেছেন। আজ রবিবার (০৯ এপ্রিল) এসব প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারাও সমানতালে প্রচারণা চালালেও নীরব কেবল বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য পদ বহন করা আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হচ্ছেন না-এমন খবর এতদিন বলাবলি হচ্ছিল। লোকমুখের কথা যেন সত্যি হতে চলছিল মেয়র নির্বাচনের আগে আরিফুল হক চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থতা। সম্প্রতি শারীরিক অবস্থাও ভালো যাচ্ছিল না তার। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হার্টে ব্লক ধরা পড়ার পর ৩টি রিং স্থাপন করা হয়। অসুস্থতা কাটিয়ে পুরোনো উদ্যমে কর্মে ফিরলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত।

যে কারণে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। তবে হঠাৎ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সিলেটে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও আরিফুল হক চৌধুরী যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন, দল থেকে গ্রীণ সিগন্যাল নিতে তার যুক্তরাজ্য যাত্রা। হয়েছেও তাই। বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও দলীয় পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আরিফুল হক চৌধুরীকে বহিস্কার হতে হবে না।  

ফলে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সিসিক নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদপ্রার্থী হচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। যে কারণে যুক্তরাজ্য থেকে নির্ধারিত সফর সংক্ষিপ্ত করে সোমবার (১০ এপ্রিল) দেশে ফিরছেন তিনি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্টজন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে চলতি মাসের শুরুতেই লন্ডনে যান বিএনপি নেতা এবং বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি লন্ডনে অবস্থান করেন।

জানা যায় আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তারেকের অনুমতি নিতেই লন্ডনে যান আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়রের ঘনিষ্টরা দাবি করছেন যে, নির্বাচন এবং আন্দোলন দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি মেয়র আরিফ লন্ডনে তারেক রহমানকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া সিলেটের মেয়র হিসেবে তিনি নিজেকে সফল এবং জনপ্রিয় দাবি করেন। 

এরপর তারেক রহমান আরিফুল হক চৌধুরীকে সবুজ সংকেত দেন এবং তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে বলেন এবং নির্বাচনে তাকে সহযোগিতার দেওয়া আশ্বাস দেন। অর্থাৎ আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারেক রহমানের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। খবরটি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে আরিফের ঘনিষ্ট মহল সবাই বিষয়টি নিয়ে অবগত এবং তারা এই খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব কেন্দ্র মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। আর বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৬ হাজার ৩৯৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চারদলীয় জোট সরকার আমলে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন কামরান।

তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে দলীয় ফোরামে তীব্র লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। এরপর দলের মনোনয়ন পান কামরানই। ঘটনাবহুল ওই নির্বাচনে কামরান হেরে যান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh