ব্যাটের গ্রাম নরেন্দ্রপুর

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৪ পিএম

 দেশের সিংহভাগ ক্রিকেট খেলার ব্যাট তৈরি হয় নরেন্দ্রপুরে। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সিংহভাগ ক্রিকেট খেলার ব্যাট তৈরি হয় নরেন্দ্রপুরে। ছবি: সংগৃহীত

যশোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নরেন্দ্রপুর গ্রাম। বহু বছর আগে একটি শৈল্পিক পেশা এই গ্রামকে সারা দেশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এই গ্রামেই তৈরি করা হয় দেশের সিংহভাগ ক্রিকেট খেলার ব্যাট। যে কারণে নরেন্দ্রপুরকে ব্যাটের গ্রাম বলা হয়। 

যশোরের নরেন্দ্রপুর গ্রামে ব্যাট তৈরির ইতিহাস প্রায় ৩৯ বছর আগের। এই গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার সঞ্জিত মজুমদার,  ১৯৮৪ সালের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে  বেড়াতে গিয়ে কাঠের তৈরি শিল্পকর্ম দেখে তার মাথায় আসে নতুন কিছু করার।

এরপর দেশে ফিরে ভাইপো উত্তম মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করেন। সেই সুবাদে যশোরের লিডিং স্পোর্টস দোকানের মালিক ও শহরের ঘোপ এলাকার বাসিন্দা বাবুর সঙ্গে কথা হয়। বাবু তাকে ক্রিকেট ব্যাট বানানোর পরামর্শ দেন।

এই অনুপ্রেরণায় ১৯৮৬ সালে ভাইপো উত্তম মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট তৈরি করেন। সেগুলো প্রথমে যশোরে বিক্রি হতো। বাবু তাদের আরও ব্যাট বানানোর প্রেরণা দেন। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। আস্তে আস্তে মিস্ত্রিপাড়া থেকে ব্যাট তৈরি মহাজেরপাড়া, বলরামপুর, রুদ্রপুরসহ আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে সঞ্জিত মজুমদার এই পেশার সঙ্গে জড়িত নেই। তবে এই গ্রামের ৩০-৪০ পরিবার ব্যাট তৈরির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ব্যাট তৈরির কাজ বন্ধ থাকে। শুকনোর সময় পুরোদমে কাজ চলে। প্রত্যেক কারখানায় ৪-১২ জন লোক কাজ করে। পরিবারের সদস্যরা বাদেও দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন অনেকে। প্রত্যেক কারখানা এক মৗসুমে ২৫-৩০ হাজার ব্যাট তৈরি করতে পারে।

যাতে করে এই গ্রামে বছরে ব্যাট তৈরি হয় প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার। ব্যাট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ছাতিয়ান, কদম, নিম, জীবন, পিঠেগড়া, বকাল, আমড়াসহ বিভিন্ন দেশি গাছ। শ্রেণি ভেদে এই ব্যাটের দাম ২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৭টি সাইজে বাহারি নকশা, স্টিকারে তৈরি হওয়া এই সব ব্যাট পৌঁছে যায় বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। শুধু দেশ নয় এখানকার তৈরি ব্যাট বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। নারী, প্রতিবন্ধী, স্কুল পড়ুয়া ছাত্রসহ অনেকেই এখানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের কাঠের তৈরি ব্যাট সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। ইতিমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঋণ গ্রহণ করে অনেকে উপকৃত হচ্ছে। এখানে নারী পুরুষ উভয়ের কর্মক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে যেটা বেকার সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। কুটির শিল্প খাত কাঠ দিয়ে মানুষ যে ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করে সেটি আমরা সম্প্রসারণ করতে চাই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh