সাদা-কালো রঙে চারুকলার বর্ষবরণ, হবে ‘প্রতিবাদী শোভাযাত্রা’

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫৭ পিএম

সাদা-কালো রঙে চারুকলার বর্ষবরণ। ছবি: চবি প্রতিনিধি

সাদা-কালো রঙে চারুকলার বর্ষবরণ। ছবি: চবি প্রতিনিধি

প্রতিবছর চট্টগ্রামে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউট। এবার বৈশাখ আসতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। কিন্তু চারুকলার নেই কোন প্রস্তুতি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চারুকলা ইন্সটিটিউটও বন্ধ। বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে অনুমতি চাইলেও সাড়া মেলেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের কমতি নেই। 

এদিকে প্রশাসন থেকে কোন আশার বাণী না পেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করেছে প্রতিবাদী শোভাযাত্রা করার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী দেয়াল চিত্র আঁকছেন চারুকলা ইন্সটিটিউটের দেয়ালে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুতি একমাস আগে থেকে শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবার প্রশাসন থেকে অনুমতি না দেয়ার কারণে কোন আয়োজন করা হচ্ছে না। গতবারও তারা এই আয়োজনগুলো করতে গড়িমসি করেছেন। এবার তো কোন ধরনের আয়োজনই করা হচ্ছে না। তাই আমরা নিজ উদ্যোগে কিছু প্রতিবাদী আয়োজন করছি। সংস্কার কাজের জন্য মূল ফটক বন্ধ থাকায় আমরা বাইরে থেকেই প্রতিবাদী মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করব।

এদিকে, ইনস্টিটিউটের বাইরে সাদা-কালো রঙে দেয়ালচিত্র আঁকছেন তারা। সেখানে লেখা- ‘বৈশাখ গুম হয়ে গেছে’, ‘আমাদের বৈশাখ কই’, ‘চারুকলা সংস্কার নয়, স্থানান্তর চাই’।

চারুকলা ইন্সটিটিউটের জহির রায়হান নামের শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে বর্ষবরণ উপলক্ষে এবার কোন অনুমতি দেয়া হয় নাই। তাই এবার আমরা শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। শোভাযাত্রাটি হবে প্রতিবাদী। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেয়ালে দেয়ালে ছবি আকার কাজ শুরু করে দিয়েছি। আর ফটকের বাইরে থেকেই কাজ শুরু করছি। যেহেতু আমাদের রঙিন সময় কেড়ে নিছে তাই আমরা সাদা কালো প্রতিবাদী শোভাযাত্রা বের করব।  কারণ তারা আমাদের চারুকলা সংস্কার ও ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েও দফায় দফায় ইন্সটিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে যাচ্ছে। এজন্যই আমাদের এই আয়োজন। 

স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ বলেন, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশাখের কিছু কাজ দেওয়া হয় আমাদের। সেই কাজগুলো করে দিলে আমাদের বৈশাখ পালনের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়। তাছাড়া ইন্সটিটিউট থেকেও কিছু অর্থায়ন করা হয়। কিন্তু এ বছর সবকিছু থেকেই আমরা বঞ্চিত। তাই আমরা শিক্ষার্থীরা মিলেই সীমিত পরিসরে যতটুকু সম্ভব হয় করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার  বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউট বর্তমানে বন্ধ আছে। তাই চারুকলাকেন্দ্রিক যে বর্ষবরণ ও শোভাযাত্রা, সেটি এ বছর হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যে শোভাযাত্রা ও দেশীয় খেলাধুলার আয়োজন, সেটি হবে।

চারুকলা ইন্সটিটিউটকে এবার বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার  অনুমতি না দেয়ার কারণ জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া মেলেনি। 

গত বছরের ২ নভেম্বর ২২ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ও ক্লাস বর্জন শুরু করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। পরে সেই ২২ দফা দাবি মূল ক্যাম্পাসে ফেরার এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। চলমান আন্দোলনের মধ্যেই গত ২ ফেব্রুয়ারি সংস্কারকাজের জন্য চারুকলা ক্যাম্পাস ও হোস্টেল এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর আরও দুই দফায় বাড়ানো হয় চারুকলা বন্ধের মেয়াদ, যা এখনো বন্ধই রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh