খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ পিএম
ফুল দিয়ে পূজা করছেন চাকমা তরুণ-তরুণীরা। ছবি: খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়িতে চলছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি। আজ বুধবার (১২ এপ্রিল) সকালে চেঙ্গী নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করে বিজুর মূল আনুষ্ঠানিকতা। এতে অংশ নিয়েছে হাজারো মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। রীতি অনুযায়ী পুরানো বছরের দুঃখ জরা ভুলে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় গঙ্গা দেবী ও উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে পূজা করে চাকমা তরুণ-তরুণীরা।
চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় এই আয়োজন। চাকমা তরুণ তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতা, রজ্ঞনসহ নানা রকমের ফুল দিয়ে পূজা করে। পরে নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়।
ফুল বিজুতে অংশ নেয়া নূপুর চাকমা বলেন, ‘গত বছরের যতো দুঃখ কষ্ট গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিব। প্রতিবছর আমরা এখানে জড়ো হয়।’
উৎসবে অংশ নেয়া ড. রাজষী চাকমা, ‘ফুল দিয়ে উপগুপ্ত বুদ্ধকে পূজা করি। ফুল দিয়ে ঘর সাজাই। নতুন বছরকে বরণ করি এবং পুরনো বছরকে বিদায় জানাই।’
পাহাড়ে এই উৎসব দেখতে যোগ দেয় পর্যটকরাও। ফুল ভাসানো বা ফুল বিজু চাকমাদের উৎসব হলেও সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধনে এই উৎসব সার্বজনীন রূপ নেয়।
ফুল বিজুতে অংশ নিতে আসা রেহানা ফেরদৌসী জানান, ‘এই উৎসবের কথা বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। আজকে প্রথমবারের মতো এখানে আসার সুযোগ হয়েছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে এসেছি। আমার খুবই ভালো লাগছে। এমন বর্ণিল আয়োজন সত্যিই মুগ্ধ করে।
ফুল বিজুর মাধ্যমে পাহাড়ে যে উৎসব শুরু হয়েছে তার মধ্য পাহাড়ের মানুষের মধ্যে ঐক্যেও বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে মনে করেন বৃহত্তর খবংপুড়িয়া বিজু উদযাপন কমিটির আহবায়ক ধীমান খীসা।
তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ বছর ধরে এখানে ফুল বিজু উদযাপন করি। নতুন বছরকে বরণ করতেই আমরা নদীতে ফুল দিয়ে পুজা করি।’
সকালে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের উৎসবের মধ্য দিয়ে পারস্পারিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শান্তি ধার উন্মোচিত হচ্ছে। আমাদের অনুভূতি অসাধারণ। শান্তি ও সম্প্রীতি আরো উন্নত হবে, আরো মজবুত হবে।’
উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। ফুল বিজু উৎসবে অংশ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো, নাঈমুল হক জানান, ‘অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ নিরাপত্তায় কাজ করছে।’