রমজানের অনুষঙ্গ জাকাত ও ফিতরা

লিয়াকত আলী

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

লিয়াকত আলী। ফাইল ছবি

লিয়াকত আলী। ফাইল ছবি

মাহে রমজানুল মোবারকের প্রধান কর্তব্য রোজা আদায় করা। তবে এ মাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে দুটি আর্থিক ইবাদত। একটি জাকাত, অপরটি সদাকাতুল ফিতর। এমনিতে মহানবী (সা.) এ মাসে দান সদকা বাড়িয়ে দিতেন বলে বর্ণিত আছে বুখারী শরীফের হাদীছে।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে দানশীল ব্যক্তি। আর রমজানে যখন তার সাথে জিবরাইল (আ.) সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও দানশীল হয়ে যেতেন। 

হজরত জিবরাইল (আ.) রমজানে প্রতি রাতে তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তার সাথে কুরআন পাঠ করতেন। তখন আল্লাহর রাসূল সা. হয়ে যেতেন মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল।

আল্লাহর রাসূলের এই দান সদকা ছিল নফল। কেননা তিনি কখনোই সম্পদ সঞ্চয় করেননি। ফলে তার ওপর কখনোই জাকাত ফরজ হয়নি। তাছাড়া ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদি ইবাদত জাকাত আদায়ের জন্য কোনো মাস নির্ধারিত নেই। কিন্তু আল্লাহর নেককার বান্দারা জাকাত আদায়ের জন্য এ মাসটি বেছে নেন বেশি ছওয়াব লাভের আশায়। কেননা মহানবী (সা.) এ মাসের যে কোনো ইবাদতের প্রতিদান অন্য মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বলে ঘোষণা করেছেন। এ জন্য রমজান মাস জাকাত আদায়ের একটা ভালো সময় বলে মনে করা হয়।

জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত। কারও কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা সমান মূল্যের বর্ধনশীল সম্পদ এক বছর সঞ্চিত থাকলে তা থেকে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হারে জাকাত আদায় করতে হয়। যখন এ সম্পদ সঞ্চিত হবে, তখন থেকে চাঁদের হিসেবে এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত ফরজ হয়। 

সম্পদ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এই যে, সব কিছুর মালিক আল্লাহ তায়ালা। মানুষের কাছে তা আমানত স্বরূপ। আল্লাহ তায়ালার হুকুম মোতাবেক সম্পদ ব্যয়ের অনুমতি রয়েছে। কেউ নিজের শ্রম ও মেধা ব্যয় করে যে সম্পদ উপার্জন করে, তা ভোগ করার নিরঙ্কুশ অধিকার তার নেই। বরং অভাবী ও বঞ্চিত মানুষদেরও তাতে প্রাপ্য রয়েছে। তাদের সেই প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে। 

যারা সবেমাত্র মুসলমান হয়েছে, এখনো দৃঢ়তা আসেনি তাদের অসহায়ত্ব দূর করার জন্য যেমন আর্থিক সহায়তা করা প্রয়োজন, তেমনি যাদের ঈমান দৃঢ় হয়েছে, তাদেরও সহায়তা করা প্রয়োজন অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য। কোনো দাস বা দাসী যদি মুক্তি লাভের জন্য মনিবের সাথে আর্থিক চুক্তি করে, তাহলে তাকে সেই অর্থ পরিশোধে সহায়তার জন্য জাকাতের অর্থ দান করা যায়। বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। কিন্তু যারা বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি থাকে, কিন্তু অর্থাভাবে আইনি সহায়তা পেলে সহজে মুক্তি পেতে পারত, তারা এ শ্রেণির আওতায় পড়বে। মুসাফির ব্যক্তি নিজ বাড়ি থেকে দূরে থাকার কারণে সাময়িকভাবে আর্থিক কষ্টে পড়লে তাকেও জাকাতের অর্থ দিয়ে সহায়তা করা যাবে। 

মাহে রমজান উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সম্প্রীতি ও সমবেদনার অমিয় শিক্ষা নিয়ে উপস্থিত হয়। রমজানের শেষে ঈদ উৎসবে যেন সচ্ছল পরিবারের সাথে অভাবী পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে বিশেষভাবে। আরেকটি তাৎপর্য রয়েছে। গোটা মাস পানাহার ও কামাচার বর্জন এবং পাপাচার পরিহার করে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ।

নাতিদীর্ঘ কালব্যাপী এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারা আল্লাহতায়ালার তাওফিকেই সম্ভব হয়। তাই যখন পবিত্র মাস শেষ হয়ে আসে, তখন আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ ও তাওফিকের জন্য তার শোকর আদায় করা মুমিনের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। সামান্য পরিমাণে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে মুমিন বান্দারা কষ্টকর ইবাদতটি পালনে সক্ষমতাদানের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।

সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। কারও কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর ওয়াজিব হয় সদাকাতুল ফিতর আদায় করা। জাকাতের সাথে পার্থক্য এই যে, প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া ও এক বছর স্থিতিশীল থাকা শর্ত। কিন্তু সদাকাতুল ফিতরের বেলায় এ দুটি শর্ত নেই। এজন্য কারও কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থাবর ও অনুৎপাদনশীল সম্পদ থাকলেও এবং শুধু ঈদুল ফিতরের দিনটিতে থাকলেই তাকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।

যার বা যাদের ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়, তিনি বা তারাও তা দিতে পারেন। এটা আদায় করতে হয় নিজের ও নিজের পোষ্যদের পক্ষ থেকে। সর্বনিম্ন এক কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা বা তার মূল্য মাথাপিছু সদাকাতুল ফিতর। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১১৫ টাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

এটা ন্যূনতম কর্তব্য।  ঈদের নামাজে রওনা হওয়ার আগেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করা কর্তব্য। কেউ তাতে ব্যর্থ হলে ঈদের নামাজের পর আদায় করতে হবে। সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় ও স্থাপনা নির্মাণ বা আসবাবপত্র খরিদের খাতে সদাকাতুল ফিতর ও জাকাতের অর্থ দেওয়া যায় না। তবে ইয়াতিম, দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তা দেওয়া যাবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh