ঈদযাত্রায় ভোগান্তি দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৮ এএম

সম্পাদকীয়। প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়। প্রতীকী ছবি

পবিত্র রমজান শেষে ঈদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পরিবারের সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটায় জমজমাট ঈদবাজার। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হাজারো অভিযোগে সাধারণ মানুষের উৎসবের আনন্দ অনেকটাই ম্লান। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের চলছে ঈদ বাজেটে কাটছাঁট।

রমজানের আগে থেকেই দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণের লাগাম টেনে ধরার ব্যাপারে সরকারের সংস্থাগুলোর নানা তৎপরতার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এর প্রভাব দেখা যায়নি বাজারে। চাল ডাল তেল চিনি মসলাসহ প্রতিটি পণ্যই কিনতে হয়েছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। ঈদের পোশাক এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্যের মূল্যও চড়া। কোনোভাবেই যেন থামানো যাচ্ছে না মূল্যবৃদ্ধির লাগাম।

এর মধ্যেই প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়ে গেছে টিকিট না পাওয়ার শঙ্কায়। টিকিটের জন্য বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে  ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও গন্তব্যের টিকিট পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। এর আগে ঈদ মৌসুমে ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে স্টেশনে সারারাত অপেক্ষা করে টিকিট সংগ্রহে ব্যর্থতা, কালোবাজারিদের স্টেশন কেন্দ্রিক বেপরোয়া হয়ে ওঠা, যাত্রীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নেওয়ার চিত্র আমরা দেখেছি। 

এই দুর্ভোগ লাঘবে অনলাইনে টিকিট বিক্রি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু এখন দেখা যায় এক মিনিটের মধ্যেই যেন সব টিকিট গায়েব হয়ে যায়। এরপর আবার কালোবাজারিদের কাছেই ধরনা দিতে হচ্ছে যাত্রীকে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে সংগ্রহ করতে হচ্ছে টিকিট।। ঈদের সময় নৌ, স্থল ও ট্রেনে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরও যাত্রীর সংখ্যার তুলনায় তা অপ্রতুল। ফলে ঈদে ঘরে ফিরে যাওয়া-আসার বিষয়টিতে ভোগান্তি কমছে না।

প্রতিবছরই দেখা যায়, ঘরমুখো অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপে সড়কে গণপরিবহন ও নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে। চাপ সামলাতে না পেরে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি গাড়ি উঠানোর ফলে মাঝপথে ফেরিডুবির ঘটনায় শত শত মানুষ মারা যায়। আর এসব দুর্ঘটনায় পর তদন্ত করে বলা হয় ফেরির ফিটনেস কিংবা লঞ্চে অদক্ষ চালকের কথা। এ জন্য আগেই কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল ভ‚মিকা রাখতে হবে। নদীপথে ঈদের সময় ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যেন নামতে না পারে।

এদিকে উত্তরবঙ্গের মানুষেরও এবার বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরতে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সংযোগ মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় তাদের জন্যও এবারের ঈদযাত্রা খুব বেশি স্বস্তির হবে না। যানজট, ভাঙা রাস্তার দুর্ভোগ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে তীব্র গরম। বিশেষজ্ঞদের মতে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন বাড়ি যাবে গড়ে ৩০ লাখ মানুষ। যাত্রীদের বড় অংশ যানবাহন সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

ঈদে যাতে সবাই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলে যেতে পারে, সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনা, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বাড়তি আয়োজন গ্রহণের মাধ্যমে উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতে হবে। সবার যাত্রা আনন্দময় ও নিরাপদ হোক।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh