ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাহাকার

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫৭ পিএম

ভূগর্ভস্থ পানি। ছবি: সংগৃহীত

ভূগর্ভস্থ পানি। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের লালপুরে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় মানুষ সাবমারসিবল পাম্পে ভিড় করেছে। তীব্র গরম জনিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় প্রায় ৫৪ হাজার হস্ত চালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। যা সাধারণত পানির স্তর গড়ে ২৫ থেকে ২৭ ফুট গভীরে পৌঁছালে পানি উঠে থাকে। কিন্তু তীব্র তাপদাহে উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে ৩২ ফুটের নিচে নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল দুড়দুড়িয়া, বিলমাড়িয়া, ঈশ্বরদী, লালপুর ইউনিয়ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এছাড়া চংধুপইল, আড়বাব ও ওয়ালিয়া এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

দিয়াড় শংকরপুর চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, বাড়ির চাপকলে এক গ্লাস পানি ওঠছে না। তাই পানির অভাবে পাশের গভীর নলকূপ থেকে পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন।

মোহরকয়া চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। পানির অভাবে চাষাবাদ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পাইপে ঠিকমতো পানি উঠছে না। তার ওপর বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন। মাঝ রাতে মাঠে গিয়ে অনেক চেষ্টা করে এক বিঘা জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে পারেননি।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিন আহমেদ বলেন, পদ্মা নদী তীরবর্তী সবচেয়ে উঁচু ও কম বৃষ্টিপাতের এলাকা লালপুর। চলমান টানা খরা, অনাবৃষ্টি ও পরিবেশগত নানা কারণে পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাপন করা সাবমার্সিবল পাম্প ও অগভীর নলকূপে পানির সমস্যা নেই। যেকোনো সমস্যায় মেরামত ও পানি সঙ্কট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সচেষ্ট রয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেই ভূগর্ভের পানির স্তর উঠে আসলে সমস্যা থাকবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলমান দাবদাহে উপজেলায় কৃষির ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কৃষকরা সেচের মাধ্যমে সবজি ও ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


দেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতম স্থান লালপুরে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পবিত্র রমজান আর গরমের উত্তাপ এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইফতারি, তারাবী ও সেহেরির সময়ও ছাড়াও দিন রাত মিলিয়ে অর্ধেক বা তার বেশি সময় লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো লোডশেডিং শিডিউল ছাড়াই এ ভোগান্তি হচ্ছে।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ লালপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রেজাউল করিম খান বলেন, হঠাৎ করে অতিরিক্ত গরমের কারণে জেনারেশন ফল্ট ও চাহিদা বেড়ে যাওয়া বিদ্যুতের লোড বেড়ে গেছে। গরমের কারণে বাসা বাড়ি, মার্কেট, অফিসে এসির ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কম সরবরাহ পাচ্ছেন। তবে সেহেরি ও ইফতারের সময় যেন লোডশেডিং না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনে (১৩-১৬ এপ্রিল) হাসপাতালে ৬০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগী ভর্তি হয়েছেন তিনজন। আর অন্যান্য রোগী ৬১ জন। হিট স্ট্রোকের কোন রোগী ভর্তি হয়নি।

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম শাহাব উদ্দিন তীব্র গরমে সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা, ছাতা ব্যবহার করা, বেশি করে পানি পান করা, সূতির কাপড় পরা, খোলামেলা জুতা পরা, ভারী ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা, বাসী খাবার না খাওয়া, ঘরে পানি ভর্তি বালতি রাখা, প্রতিদিন গোসল করা ও হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে মাংসপেশি ব্যথা, দুর্বল লাগা ও প্রচণ্ড পিপাসা হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে প্রেশার পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh