ইসলামে ফিতরার গুরুত্ব ও আদায়ের নিয়ম

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গরিব-দুঃখীর মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা। সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা এক সা (দুই হাতের কবজি একত্র করে চার খাবরিতে যে পরিমাণ খাবার ওঠে) পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিশমিশ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (বুখারি, হাদিস: ১৫০৬)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সদকায়ে ফিতরকে ফরজ করেছেন- রোজাকে ভুল-ক্রটি থেকে পবিত্রকরণ ও দরিদ্রদের পানাহারের ব্যবস্থা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগেই সাদকায়ে ফিতর আদায় করবে, তার ফিতরা মকবুল হিসেবে গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পরে আদায় করবে, তার ফিতরা সাধারণ সাদকা হিসেবে গণ্য হবে। (জামেউল ফাওয়ায়েদ- ১/১৪৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ওই দিন ভিক্ষুকদের ভিক্ষা চাওয়া থেকে মুক্ত করে দাও।

ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় কারও কাছে যাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ, অর্থাৎ- সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত কিছু সম্পদ যদি বিদ্যমান থাকে, তাহলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনস্তদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির- ২/২৮১ পৃষ্ঠা)।

নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। ফিতরা ওয়াজিব হওয়া মাত্রই তা আদায় করতে হবে, নাকি পরে করলে চলবে? এ ব্যাপারে বাহরুর রায়েক কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে- সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা আদায় করা উত্তম। (আল বাহরুর রায়েক- ২/২৫১ পৃষ্ঠা)।

ঈদের দিনের পূর্বে ফিতরা দেওয়া জায়েয। রাসূলুল্লাহ (সা.)এর যামানায় সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিনের আগেই ফিতরা আদায় করে দিতেন। (আল বাহরুর রায়েক- ২/২৫১)।

যেসব মুসলমানের এই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, যার মূল্য এই পরিমাণ হয় যে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে, তাহলে তার ওপর ঈদের দিন সদকায়ে ফিতর বা ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব, চাই সে সম্পদ ব্যবসায়ের হোক বা না হোক এবং পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত হোক বা না হোক। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী এ সাদকাকে সাদকায়ে ফিতর বলা হয়। (হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী- ৩৯৪ পৃষ্ঠা)।

যে ব্যক্তি কোনও কারণবশতঃ রোযা রাখতে পারেনি, তার ওপরও সাদকায়ে ফিতর বা ফিতরা ওয়াজিব। যে রোজা রেখেছে তার উপরও ওয়াজিব। যে শিশু সন্তান ঈদের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার পর জন্ম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে শিশু সুবহে সাদিকের পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা সক্ষম অভিভাবকের ওপর ওয়াজিব। (আলমগীরী- ১/১৯২ পৃষ্ঠা)।

ইবনে ওমর (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস- ১৫০৯)।

তবে কারো যদি কোনও কারণবশত ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আলেম সমাজ এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। উপরের ৫টা খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে দামী খাবারের দাম আর সবচেয়ে কমদামী খাবারের দামের হিসাব করে তারা এই ফিতরার রেঞ্জ নির্ধারণ করেন। এ বছর (১৪৪৪ হিজরী, ২০২৩ ইং) সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ তারা এভাবে নির্ধারণ করেছেন:

যব-৩.৩ কেজি বা তার সমমূল্যের ৩৯৬ টাকা, খেজুর-৩.৩ কেজি বা তার সমমূল্যের ১৯৮০ টাকা, পনির- ৩.৩ কেজি  বা তার সমমূল্যের ২৬৪০ টাকা, কিসমিস-৩.৩ কেজি বা তার সমমূল্যের ১৬৫০ টাকা, গম বা আটা- ১.৬৫ কেজি  বা তার সমমূল্যের ১১৫ টাকা। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh