গরমে নষ্ট হচ্ছে ওষুধ: সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩০ এএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫১ এএম

সম্পাদকীয়। প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়। প্রতীকী ছবি

রোগ নিরাময়ের ওষুধ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তার প্রয়োগ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ফার্মেসিতে কোন ওষুধ কত তাপমাত্রায় কীভাবে রাখতে হবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার সঠিক নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বাজারে প্রচলিত ওষুধের প্রায় ৯০ শতাংশই ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য। 

এসব ওষুধ ঠান্ডা ও শুকনা স্থানে আলো থেকে দূরে রাখতে হয়। কিন্তু গরমের সময় দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৮-৩৫ ডিগ্রি থেকে কখনো কখনো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও অতিক্রম করে। যেমনটা এবার দেখা গেছে। যার প্রভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওষুধের দ্রব্যগুণ। বিপজ্জনক ব্যাপার হলো, কখনো কখনো সেই নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধই খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু অতি সংবেদনশীল ওষুধ যেমন-বিভিন্ন ধরনের হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি একটু বেশি তাপমাত্রা পেলেই নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমাদের দেশের ওষুধের দোকানগুলোয় সংরক্ষণের যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তাপমাত্রা একটু বাড়লেই ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়। সব ফার্মেসিতে ওষুধ সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর থাকেও না। ফলে এসব ওষুধ সেবন করাটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। 

আবার জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও ওষুধ সংরক্ষণে শতভাগ নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সরকারি হাসপাতালে টিকা রাখার জন্য রেফ্রিজারেটরের স্বল্পতাও রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আবার নষ্ট। 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। কিন্তু শুধু ওষুধ প্রস্তুত করলেই হবে না, ওষুধের কার্যকারিতা রক্ষায় পরিবহন, বিপণন, মজুদ ও সংরক্ষণের প্রতিটি স্তরকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সারা দেশে যাচ্ছেতাইভাবে চলে ওষুধের কেনাবেচা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক হয়ে উঠেছে যে দেশের ১০ শতাংশেরও কম ওষুধের দোকানে সঠিকভাবে তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনা কার্যকর আছে, বাকি সবটাই চলছে বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য দিয়ে। 

তাই হাসপাতাল, ফার্মেসি ও ক্রেতা সবার সচেতনতা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) বিভিন্ন দেশে অনুসৃত নীতিমালা অনুযায়ী, ফার্মেসি, ওষুধ কারখানাসহ প্রতিটি স্তরে একইভাবে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। আবার বাসা-বাড়িতেও যথাযথ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ব্যাপারে অসচেতনতা আছে। এজন্য ফার্মেসিগুলোতে প্রয়োজন একজন রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট, যিনি ওষুধ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে বুঝিয়ে দেবেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ওষুধ সংরক্ষণের বিকল্প প্রক্রিয়াগুলো প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সরকারি পর্যায়ে মডেল ফার্মেসির যে উদ্যোগ তা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh