নৌকার তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখম: ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৩

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম

নৌকার তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

নৌকার তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগর আওয়ামী লীগের বিরোধ এখন বড় ধরনের সংঘর্ষের দিকে গড়াচ্ছে। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার রাতে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং র‌্যাব। ওই ১৩ জনসহ মোট ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মেয়র প্রার্থীর অনুসারী। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সোমবার (১৫ মে) দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

কারাগারে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্না, ছাত্রলীগ নেতা মো. নাদিম, মো. পারভেজ হাওলাদার, মো. শান্ত ইসলাম, মো. মেহেদী হাসান, মিজানুর রহমান শাওন, মো. মামুন হাওলাদার, মো. রাসেদ হাওলাদার, মো. আল আমিন হাওলাদার, মো. নান্টুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

এছাড়া মো. ইমরান হোসেন সজিব, মো. ফাহিম এবং মো. সুমন হাওলাদারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব- সদস্যরা। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহমেদ মান্নাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার এবং কুপিয়ে জখমের ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডে শহীদ সোহেল চত্বরে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর।

লিখিত বক্তব্যে একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মান্না ঘটনাস্থলেতো দূরে থাক, সে দুই কিলোমিটারের মধ্যেই ছিলেন না। এই ঘটনা সম্পর্কিত কোন ভিডিও ফুটেজও কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানান সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীরা।

এর আগে রবিবার রাতে পৌনে ৯টার দিকে নগরীর কাউনিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের কালাখার বাড়ি এলাকায় সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ ওঠে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্না ও তার লোকদের বিরুদ্ধে।

আহতরা হলেন- নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, জাহিদ ভূঁইয়া ও মহা আহমেদ। এরা সবাই নগরীর বাজার রোড এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহতরা জানায়, রবিবার রাতে কাউনিয়া মহাশ্মশানে তাদের বন্ধুর দাহ শেষে ফেরার পথে রইজ আহাম্মেদ মান্নাসহ ১০০-১৫০ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় তারা তিনজনকে পিস্তল ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আহত মনা আহমেদের দাবি, খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তারা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। এর জের ধরেই তাদের তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছেন মান্না ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

যদিও গ্রেপ্তারের পূর্বে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্না দাবি করেন, গত পাঁচদিন ধরে তিনি নগরীর কালিবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনে সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিলেন। কাউকে মারধর বা কুপিয়ে জখম করেননি তিনি। তার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ মান্নার।

এদিকে কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, কুপিয়ে জখমের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ১৩ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে কাউনিয়া থানা পুলিশ এবং ৩ জনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে।

তিনি জানান, রবিবার গভীর রাতে এই হামলার শিকার মনা আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় ২১ জন নামধারী এবং ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় নৌকার কর্মী মনার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি ও পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত এবং বাকি দুজনকে লোহার রড ও হকিস্টিক-লাঠি দিয়ে মারধর ও জখমের অভিযোগ করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।

কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান মুকুল বলেছেন, এই ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিসহ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh