চা

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ১১:১৫ এএম

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

লন্ডনকে ঘুষ দিয়ে আমরা চা পান করি।
আমাদের পাহাড়ের গায়ে বাগান,
আমাদের মালী চারা গজায়,

কুঁড়ি পাতা চয়ন করে আমাদেরি কুলি,
তারা ন্যাংটো, অসভ্য, কালো।
পোড়া কয়লার মতো কালো।
সাদা রাজা তাই তার তৈরী চা খেয়ে বলে,
বাঃ বেশ তো!
বিজ্ঞাপন ঘোষণা করে সহাস্যে
জগতের সেরা দেশ ইংলন্ডের
চারটের চা খাওয়ার উৎসব!
কী ভীষণ বিজ্ঞাপন,
যেন বিদেশী নেশাখোরের চোরাগোপ্তা আত্মাভিমান-

চা-কে ক্যাটালিটিক এজেন্ট করে,
লেডির সাথে মিলন ঘটানো
টিনের মগে চা-খাওয়া লোকটার
দুজনেই চা খায়, তাই,
সমান তারা,
যুক্ত।
সোসাইটি লেডি তার যৌন-চিকন কাঁপা হাতে
চা বিলায় লর্ডদের পেয়ালায়,
মজুর রাস্তায় টিনের মগ থেকে চা খায়!
বিস্কুট-ফিস্কুট কিছু নয়,
ঠান্ডা অমিষ্ট ক্ষীরহীন জলো চা।
চা কাদের রক্ত,
চা কাদের জীবন যৌবন আশা আনন্দের নির্যাস,
চা কাদের বন্ধ্যা জন্মকামনা,
কাদের জেল চাবুকের ব্যথা,
কাদের কুমারী জীবনের বলাৎকারের যন্ত্রণা.
কাদের সর্বভারতীয় জীবন-সিন্ধু মন্থনের বিষ,
কে তা জানে?
কে তা জানতে চায় এক পেয়ালা চা খেতে চেয়ে!
চা তো তারাও খায়,
পথের ধারে মাটির ভাঁড়ে,
যারা পাংশু সাদাটে হয়ে গেছে চা খেয়ে!
লালমুখো সাদাদের ডিম মাছ মাংস
দুধ ক্ষীর ননী ছানা
আর মানুষ খায় ন্যায্য রোগের চিকিৎসায়।

তাজা রক্তের রঙটা লালচে,
পাত করে মরলে দেখায় কালচে।
তা, চায়ের নির্যাস কালচে রক্তের
জলো শরবতের মতো নয় কি?
গুড়জ রসের সোডা মেশানো
কাচের গ্লাসের সুধারসের মতো নয় কি?
আমরা হিংস্র প্রাণী, রক্তমাংস রক্ষায় নিবিষ্ট,
রক্তপানের দারুণ পিপাসা!
সুন্দর পেয়ালা, চকমকি পাথরের ঝকমকি রূপ যেন
পালিশে চোয়ানো মৃদুমন্দ,
তলায় গোপনে লেখা মেড ইন ইংলন্ড।
ইংলন্ডকে বাঁচাতে, মার্কিনী ঢঙের উদারতায়,
আমরা কাচের কাপে চা খেয়ে মরি।
লন্ডনকে ঘুষ দিয়ে আমরা চা পান করি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh