চন্দ্রাভিযান আবারও প্রশ্নবিদ্ধ

কাজী সানজীদ

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ১২:২৬ পিএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৩, ১২:২৭ পিএম

পঞ্চাশ বছর আগে প্রযুক্তির সাহায্যে মার্কিনিরা চাঁদে গিয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চাশ বছর আগে প্রযুক্তির সাহায্যে মার্কিনিরা চাঁদে গিয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, নিচের আলোচনা এবং বৃত্তান্ত বিভিন্ন সূত্রের তথ্য ও মন্তব্য থেকে সংগৃহীত। এগুলোকে সন্দেহাতীত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না। তবে তথ্যগুলো নিঃসন্দেহে চিন্তার খোরাক জোগায়। আমরা জানি, ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) প্রথম মহাশূন্যে মানুষ প্রেরণ করে, সে নভোচারীর নাম ছিল ইউরি গ্যাগারিন। 

তখন যুক্তরাষ্ট্র ঈর্ষাকাতর হয়ে সদম্ভে ঘোষণা করে, তারা সবার আগে ১৯৭০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ অবতরণ করাবে। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি সেই বিশেষ ঘোষণাটি দেন। সে অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে ‘অ্যাপোলো ১১’-এর মাধ্যমে তারা চাঁদে মানুষ অবতরণ করায়। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে প্রথম পদার্পণকারী মানুষ হিসেবে ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন। কিন্তু নীল আর্মস্ট্রং কি সত্যিই চাঁদে অবতরণ করেছিলেন নাকি সেটি ছিল স্ট্যানলি কুবরিকের তৈরি একটি দুর্দান্ত অভিযান কাহিনির চলচ্চিত্র? 

এ বিতর্ক খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই চলছে বহু বছর ধরে। সরকারি ভাষ্যের বিরুদ্ধে কিছু আলোচিত হলে সেগুলোকে বলা হয় কন্সপিরেসি থিয়োরি। অ্যাপোলো ১১-এর চন্দ্রাভিযানের বিরুদ্ধে আলোচনাও এই শ্রেণির একটি থিয়োরি। সর্বশেষ এ আগুনে ঘি ঢেলেছেন রাশিয়ান মহাশূন্য সংস্থা রসকসমসের প্রাক্তন প্রধান দিমিত্রি রগোজিন। 

এক দশক আগে রগোজিন যখন রাশিয়ান সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি মার্কিনিদের চাঁদে অবতরণের প্রমাণ চেয়ে রসকসমসের কাছে একটি বার্তা পাঠান। উত্তরে তিনি শুধু একটি পুস্তক পেয়েছিলেন যেটির নাম ‘কংকোয়েস্ট অব দি মুন বাই অ্যাস্ট্রোনটস’। 

একজন রাশিয়ান নভোচারী তাকে বলেন, আমি জানি মার্কিনিরা আসলেই চাঁদে অবতরণ করেছিল। কারণ তারা আমাকে সেকথা বলেছে। এরপর রগোজিন ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত রসকসমস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি এই বিষয়ে সত্য উদঘাটনের উদ্দেশ্যে নিজস্ব গবেষণা শুরু করেন। 

সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তিনি মার্কিন নভোচারীদের চাঁদে অবতরণের অকাট্য প্রমাণ পাননি। সে কারণে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন যে মার্কিনিরা আসলেই চাঁদে অবতরণ করেছিল কিনা! বিশেষ পর্যবেক্ষণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, আমরা দেখেছি রাশিয়ান নভোচারীরা মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করার পর এতটাই ক্লান্ত ও দুর্বল থাকতেন যে, ঠিকভাবে দাঁড়াতেই পারতেন না। 

দীর্ঘমেয়াদি নিরাময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে আবার স্বাভাবিক সুস্থতায় ফিরিয়ে আনতে হতো। অথচ, দেখা গেছে মহাশূন্য এবং চন্দ্রাভিযানের পর পৃথিবীতে ফিরে আসা মার্কিন নভোচারীরা বেশ চনমনে এবং তরতাজা! তারা চন্দ্রযানের ভিতর থেকে যেভাবে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে এসেছেন, তাতে মনে হয়েছে বাগান থেকে সদ্য বেরোনো তাজা শসা। 

তবে প্রত্যাবর্তনের পর সাংবাদিক সম্মেলনে তাদেরকে যতটা উৎফুল্ল ও প্রাণবন্ত থাকার কথা ছিল, বাস্তবে তা দেখা যায়নি। পরবর্তী সময়েও কোনো আলোচনায়ই তাদেরকে এ বিষয়ে খুব এক্সাইটেড মনে হয়নি, বরং এ অর্জনের প্রাণবন্ত প্রকাশ থেকে কিছুটা বিরত থেকেছেন। হয়তো এই ভেবে যে, এত বড় মিথ্যা অভিনয় করি কীভাবে! রগোজিন আরও একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। প্রথম সফল চন্দ্রাভিযান হয়েছে জুলাই ১৯৬৯ সালে। গত চুয়ান্ন বছরে বিজ্ঞান বিপুল এগিয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিনিরা বর্তমানে পুনরায় চাঁদে ফিরে যেতে সক্ষম হচ্ছে না কেন!

গত বছর দিমিত্রি রগোজিনকে অকস্মাৎ তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ইউরি বরিসভ তার স্থলাভিষিক্ত হন। এর কোনো কারণ জানা না গেলেও অনেকেই সন্দেহ করেন চন্দ্রাভিযান সম্বন্ধে রগোজিনের বিভিন্ন প্রশ্ন ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কারণেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছ। বলা বাহুল্য, তার অপসারণে মার্কিনিরা বেজায় খুশি হয়েছিল। 

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যতই রেষারেষি থাকুক না কেন; মহাশূন্য গবেষণার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক রয়েছে যা আজো বিদ্যমান। রসকসমসের কর্তাব্যক্তিরা এবং রাশিয়ান উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ রগোজিনের কৌতূহল ও সন্দেহকে ভালো চোখে দেখেননি। কারণ তারা নাসা এবং রসকসমসের মধ্যে বহুযুগের পুরনো সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট হতে দিতে চান না। 

সরকারিভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দাবি করা হয়, নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিনের চাঁদে অবতরণ তখন রাশিয়ানরাও শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে রিয়েল-টাইম ভিউতে দেখেছিল। কিন্তু সে দাবিটি সম্বন্ধে রাশিয়ানদের জোরালো সমর্থন পাওয়া যায় না। তখন তা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল তা বলা মুশকিল! এখন যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা চীনের উপগ্রহ থেকে ভূমিতে অবস্থানরত একটি ছোট ঘরও দেখা সম্ভব, তখন দূরবীক্ষণের বেলায় পরিস্থিতি এমন সুবিধাজনক ছিল না।

আগেই বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রেও চাঁদে অবতরণ করা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার মতো অনেক মানুষ আছে। সে দেশে এ স্পর্শকাতর বিষয়টি খুব জোরেশোরে আলোচিত হয় না।

পরিশেষে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, পঞ্চাশ বছর আগে যে প্রযুক্তির সাহায্যে মার্কিনিরা চাঁদে গিয়েছিল, আজ বিপুল উন্নততর বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েও তারা আবার সেখানে যেতে পারছে না কেন!

সূত্র: দি ডেইলি সাবাহ, ইস্তাম্বুল। ৮ মে ২০২৩

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh