পাঁচ সিটি নির্বাচন

বিএনপিবিহীন নির্বাচনেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ০৯:৪৫ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ০২:৫৮ পিএম

নির্বাচন ভবন। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

নির্বাচন ভবন। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরপরও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রার্থীরা। বেশ কয়েকজন মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে অভিযোগ করেছেন।

সরকারি দলের প্রার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া, স্বতন্ত্র বা অন্য প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা প্রদান, এসবে অনেকেই নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।  প্রার্থীরা বলছেন, সরকারি দল বা ইসির এ ধরনের বক্তব্য ‘আইওয়াশ’ মাত্র। এর আগেও তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছিল, বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। তারা বলছেন, এই সিটি নির্বাচনও একটি প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হবে, যা খোদ সরকারের আজ্ঞাবহ রাজনৈতিক দল ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক প্রার্থী হুমকি-ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের এনআইডি কার্ড নিয়ে নিচ্ছেন। ৫০টি এনআইডি কার্ডের জন্য আড়াই থেকে তিন লাখ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কালো টাকা ছড়ানো হচ্ছে। আবার ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই, এজন্য অনিয়মের আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এর মধ্যে আজ ২৫ মে বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কশিনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পাঁচ সিটির ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন করতে চাই। এ নির্বাচনটি আমরা মডেল নির্বাচন করব। সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের (ইসির) কথা শুনতে বাধ্য। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করবেন, দায়িত্বে কোনো রকমের অবহেলা বরদাশত করা হবে না।

কারো গাফিলতি থাকলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচনে কালো টাকার কালো সংস্কৃতি থেকে উঠে আসতে হবে। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ কথা বলে। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, জাপান ও জাতিসংঘ কথা বলছে। এ জন্য আমরা তাদের মুখ চেপে ধরতে পারি না। যদি সম্ভব হতো মুখ চেপে ধরতাম। কিন্তু তা পারব না। পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত, এখন গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শত সহস্র সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। নিজের (প্রার্থী) পক্ষে যা করণীয় সে পদক্ষেপগুলো আপনাদেরও নিতে হবে। রংপুরে ইভিএমে সমস্যা থাকায় ভোটগ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। গাজীপুরে এমনটা হবে না বলেও জানান তিনি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলামের অভিযোগ, নির্বাচনে এজেন্ট দিতে বাধা দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন জানান, শঙ্কা দূর করতে সরকারকে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, পাঁচ সিটি ভোটে নির্বাচনে আচরণবিধি মানা হচ্ছে না। সিলেটে একজন প্রার্থী রাস্তা দখল করে মঞ্চ বানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। গত ১২ মে ভোট চেয়েছেন, আমরা এটার প্রমাণ দিয়েছি। বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তার বাজে ব্যবহার এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়টিও তোলা হয়েছে। সিইসি বলেছেন তদন্ত করে দেখবেন। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ভালো নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি মূলত ইসির দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলেরও আছে, প্রার্থীদেরও আছে, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদেরও আছে। কাজেই সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের মনের মধ্যে একটা শঙ্কা যে, নির্বাচনটা ফ্রি-ফেয়ার হয় কিনা। তিনি বলেন, রাতারাতি ইসিও কিছু করতে পারবে না। তবে সদিচ্ছা, সাহস যদি থাকে– সেই সাহস দেওয়ার জন্যই আমরা বলেছি। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনও ‘নীল নকশা’র হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে বর্তমান সরকার বেমালুম ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে নির্বাচনের অবস্থা কেমন? এই যে মেয়র ইলেকশন হচ্ছে... বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে বিরোধী দল কোনো প্রার্থী দিচ্ছেন না। জনপ্রিয় মেয়ররা জনসভা করে বলেছেন, এ নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনই হবে না, তারা ব্লু প্রিন্ট করে ফেলেছে। এই নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হয় না এবং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। 

তিনি বলেন, নির্বাচন একটা টুল, নির্বাচন কমিশনাররা কথা বলবেন, নির্বাচন একটা দেখানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু তারা পুরো নির্বাচনটাকে তাদের মতো করে নিয়ে যাবে। এ কারণে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। হাসিনা সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh