বাংলাদেশে গুম বন্ধ ও বিচার নিশ্চিতে ১১ সংগঠনের বিবৃতি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১১:৫১ পিএম

বিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ক কয়েকটি সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ক কয়েকটি সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশকে জোরপূর্বক গুম বন্ধ এবং বিচারে নিশ্চিতে যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ক ১১টি সংগঠন। গুমের আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে সংগঠনগুলো যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রতি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো- এন্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন এগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, মায়ের ডাক, অধিকার, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার। 

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দেওয়া ওই বিবৃতি একযোগে প্রকাশ করা হয়েছে মেলবোর্ন, হংকং, ম্যানিলা, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, ঢাকা, জেনেভা, প্যারিস এবং ওয়াশিংটন থেকে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো বাংলাদেশে লাগাতার জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এতে ভিকটিমদের পরিবারের দুর্ভোগ, এসব নিয়ম লঙ্ঘনের জবাবদিহিতার অভাব, যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণের অভাব, ভিকটিম ও তাদের পরিবারের জন্য বিচারিক সেফগার্ডের অভাব থাকার কথা উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের রোম স্ট্যাটিউট’তে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে, জোরপূর্বক গুম হলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের রোম স্ট্যাটিউটে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ।  জোরপূর্বক গুম জীবনের স্বাধীনতা, মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তাচেতনা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমাবেশের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

একই সঙ্গে এটা হলো রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণের একটি হাতিয়ার। জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের ওপর মাঝেমধ্যেই নির্যাতন করা হয়, সব সময় তাদের জীবনের ভয় থাকে। কারণ, তাদেরকে রাখা হয় আইনি সুরক্ষার বাইরে। তাদের পরিবারের সদস্যরা অপরিমেয় ক্ষতির শিকার হন। তা শুধু মানসিকভাবেই নয়। একই সঙ্গে তারা কোনো উপশম বা কোনো রকম প্রতিকার ছাড়াই ক্ষত সহ্য করেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হন। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমিয়ে রাখতে এবং ভিন্নমতের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে জোরপূর্বক গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জোরপূর্বক গুম ব্যাপকতা পেয়েছে। এ ধরনের অপরাধকে অব্যাহতভাবে নগ্নভাবে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এই চর্চা বন্ধ করতে বা জড়িতদের জবাবদিহিতায় আনতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সরকার। ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং এর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তারপর থেকে জোরপূর্বক গুম সংখ্যায় কিছু কমে আসে। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বার বার গুমের শিকার ব্যক্তি ও মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও এসব পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রয়েছে। জবাবদিহিতার পথে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক গুমের শিকার পরিবারবর্গ ও মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন শুরু করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ২১টি জোরপূর্বক গুমের ঘটনা প্রামাণ্য আকারে ধারণ করেছে অধিকার। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে আরও আটটি রেকর্ড করা হয়েছে। ডকুমেন্টে দেখা গেছে, সম্প্রতি গুম করা ব্যক্তিরা স্বল্প সময়ের জন্য নিখোঁজ ছিলেন। পরে তাদেরকে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা হাজির করেছেন। গ্রেপ্তার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছেন। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনেও তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে র‌্যাব দ্বারা সংঘটিত জোরপূর্বক গুমের নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস (ডব্লিউজিইআইডি)। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। জানায়নি গুমের শিকার ব্যক্তিরা কোথায় আছেন এবং তাদের জীবন ও স্বাধীনতার কী অবস্থা। ২০২২ সালের ১৫ই মে প্রথমবার বাংলাদেশ ডব্লিউজিইআইডি’র এনকোয়ারির জবাব দেয়। বাংলাদেশের ঘটনাগুলোর বিষয়ে তথ্য জমা দেয়। তবে ওইসব তথ্য পর্যাপ্ত ছিল না। সরকার জানায়, ‘জোরপূর্বক গুম’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে সরকারকে অপমান করতে এবং তার অর্জনকে খাটো করার উদ্দেশ্যে। 

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো বলেছে, ভিকটিমদের পরিবার এবং মানবাধিকারের কর্মীদেরকে তাদের বৈধ কর্মকাণ্ড নিরাপদ পরিবেশে, কোনো রকম হুমকি, ভীতি অথবা প্রতিশোধ ছাড়া চালানো নিশ্চিত করতে হবে। এতে আরও বলা হয়, জোরপূর্বক গুম বন্ধ এবং জড়িতদের ন্যায়বিচারের অধীনে আনতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে সব রকম হাতিয়ার ব্যবহারের জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh