জায়েদার কাছে ৩ কারণে হেরেছেন আজমত উল্লা

মো: জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৩, ১১:৫৪ পিএম

গাজীপুরের নতুন মেয়র জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের নতুন মেয়র জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আজমতের পরাজয় ও জায়েদার জয় নি‌য়ে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। যে যার মতো করে অভিমত জানাচ্ছেন।

তবে আজমত উল্লার পরাজয়ের তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন গাজীপুরবাসী। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মতে, প্রথমত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা; দ্বিতীয়ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল এবং তৃতীয়ত অনেকেই বুকে নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে গোপনে জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছেন।

সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর তিনি ৩ বছরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেন।

এছাড়াও অসহায় দরিদ্রসহ বিভিন্ন মানুষকে আর্থিক সহায়তাও দেন তিনি। এভাবে নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জাহাঙ্গীর আলম।

যদিও মেয়র থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এসময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। 

জাহাঙ্গীরকে একাধিক মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কিন্তু এসব বিষয় ‘সাপে বর’ হয়ে দাঁড়ায় জাহাঙ্গীরের জন্য। উল্টো নগরবাসীর কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। আর সেই জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে জয়ের মুকুট ছুঁতে পেরেছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল

সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে নৌকাডুবি হয়েছে বলে ধারণা দলীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশের। 

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রথমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান। 

সে হিসেবে হিসেবে জাহাঙ্গীরের তুলনায় ভোটব্যাংকও কম আজমতের। আর সেই আজমতকেই ফের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নৌকার পরাজয়ের জন্য ভোট দেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে।

নৌকার ব্যাজে টেবিল ঘড়ির কর্মী-সমর্থক 

এবার নির্বাচনে জাহাঙ্গীর এবং তার মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু তার মা জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছেলেকে নিয়ে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা শুরু করেন।

মা-ছেলে ভোট প্রার্থনা করেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে। জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপক কর্মী-সমর্থক ও জনপ্রিয়তা কাল হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের।

ভোটকেন্দ্রে ঘড়ি প্রতীকের তেমন এজেন্ট ছিলো না। মূলত জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী সমর্থকরাই নৌকার ব্যাজ গলায় ঝুলিয়ে ভোট দেন এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। দৃশ্যত তারা ছিলেন নৌকার কর্মী, কিন্ত কার্যত তারা সবাই কাজ করেছেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের এক বাসিন্দা বলেন, আজমত উল্লা খান আগে একবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার আওয়ামী লীগের বোঝা উচিত ছিল গাজীপুরে তার জনপ্রিয়তা কেমন। এবার জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করলে বিপুল ভোটে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হতো। এতে আওয়ামী লীগের লাভ হতো, অন্তত এই পরাজয়টি দেখতে হতো না।  

কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী হয় তো ভোটারদের মন জোগাতে পারেননি। জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী-সমর্থকদের তিনি নিজের মনে করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি তারা তাকে ভোট দেবে না। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী-সমর্থকরা আজমত উল্লা খানের পাশে থেকে ভোট দিয়েছে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে। ফলে তার এই পরাজয়।  

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৫ মে) অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানের চেয়ে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।

এই নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ৪৮০টি কেন্দ্রে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি) পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা) পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।  

এ নির্বাচনে মেয়র পদে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা) ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট, জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল) ৭ হাজার ২০৬ ভোট, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ) ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (হাতি) ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট ও হারুন অর রশীদ (ঘোড়া) ২ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh