হাওর-নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধে হুমকির মুখে পরিবেশ

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ০৩:৪৩ পিএম

দুই নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

দুই নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

ফসল রক্ষায় হাওরের চারপাশে বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৮৫ সাল থেকে হাওরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা শুরু হয়েছে। ওই সময় স্থানীয় লোকজন ও ইউনিয়ন পরিষদ নদীর ওপর পানির প্রবাহ বন্ধ করে আড়াবাড়ি বাঁধ দিয়েছে। বর্ষায় তা আবার ভেঙে যেত। 

এ বছর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ফসল রক্ষায় ১১২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এসব প্রকল্পে দুই নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো। নদী দুটি হলো উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাগাঁও বাজারের পার্শ্ববর্তী মনাই নদী ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন সরমরা নদী।

ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির প্রবাহ ধরে রাখতে পারলে হাওরের ফসল রক্ষা পাবে। তাই গত ৪ বছর ধরে হাওরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বৌলাই নদীতে খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে পাউবো। কিন্তু একই সঙ্গে বিভিন্ন নদ-নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

হাওর পাড়ের বাসিন্দা, কৃষক ও হাওর নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা জানান, ফসল রক্ষা বাঁধ ব্যবসায়ীদের লোভের কারণে হাওর রক্ষার নামে এ উপজেলা সীমান্ত থেকে নেমে আসা অন্তত ৫টি নদীতে ৭টি স্থায়ীভাবে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পানির প্রবাহ। এ কারণে মাছের প্রজনন ব্যাহত, উৎপাদনও কমেছে, নৌযান চলাচলে বাধা, ডোবায় জলাবদ্ধতা ও হাওর থেকে হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের জীবন জীবিকায়। আর এসব অপরিকল্পিত বাঁধে প্রতিবছর মেরামত ও সংস্কার করতে ব্যয় হয় সরকারের কোটি কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, অসৎ চিন্তায় অপরিকল্পিত বাঁধ হাওরবাসীর জন্য মারণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে বাঁধ দেওয়া নদী আইনের পরিপন্থী কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড তা প্রতিবছর করেই যাচ্ছে। আবার প্রতিবছর বর্ষায় এই বাঁধ ভেঙে গিয়ে নদী ও হাওর ভরাট হচ্ছে। 

পাউবো সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলায় এ বছর অস্থায়ী ডুবন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এর আগের বছর (২০২১-২২) ব্যয় করা হয় ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা।

তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, হাওরের স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh