পাথর প্রেমিক

নাহিদা আশরাফী

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:১২ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আমিও অবশেষে প্রেমে পড়লাম। পড়লাম মানে, না পড়ে উপায় ছিল না। লোকটা কী করে, কোথায় থাক্সাথে তার ঘর, বিছানা শেয়ার করে, কেউ তাকে বাবা বলে ডাকে কি না, একটা সুশ্রী মুখ জানালার গ্রিল ধরে তার জন্যে অপেক্ষায় থাকে কি না; কিচ্ছু জানি না। জানবার কোনো আগ্রহও কাজ করে না। এই যে শ্যামলা বরন মেঘ, আকাশের সাথে যার নিত্য যাপন; সেও তো কোনো এক অজানা আকর্ষণে টুপ করে নেমে আসে মাটির বুকে। আকাশকে কি জানিয়ে আসে তার এই অভিসারের খবর? তাহলে আমাকেই বা কেন জানাতে হবে?

পার্ক পেরুতেই বাসস্টপেজ। অফিসে আসা-যাওয়ার পথে রোজ আমার অপেক্ষায় থাকে। পার্কের এক নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রচণ্ড রোদে তার চওড়া বাহুর ছায়া দিয়ে আগলে রাখে। এই তো সেদিন। বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎই দুই রাজনৈতিক দলের কোন্দল থেকে ছুটে আসা প্রায় আধখানা ইটের টুকরো আমার কপাল বরাবর এসে পৌঁছানোর আগেই সে তার ডান বাহুর আড়লে আমায় আশ্রয় দিয়ে নিজেই আঘাতটা সইলো। 

অথচ চেনা পরিচিত মুখগুলো কখন আমায় ছেড়ে পালিয়েছে। কতবার তার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে কেঁদে নিজেকে হালকা করেছি। একটি দিনও এমন হয়নি সে আমায় ফেলে আগে চলে গেছে। ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক রোজ আমার আগে আসে। রোজ আমার পরে যায়। কোনো অভিযোগ নেই, অযথা ঝাঁঝালো বাজখাঁই আওয়াজের আতঙ্ক নেই, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তার কাঁধে চেপে বসছে, তার গলা জড়িয়ে ধরছে তার হাত ধরে ঝুলনা ঝুলছে। কোনো বিরক্তি নেই। অমলিন মুখের হাসি আর প্রণয়মাখা গভীর চোখে এতটুকু বিষাদের কালো মেঘ নেই। এমন একজনকে ভালো না বেসে পারা যায়,বলুন?

ঠিক করেছি আসছে আশ্বিনে প্রথম যে শিউলির দেখা পাব সেটাই পাঠাব তার উদ্দেশে। জানি হাজারো কর্পোরেট ফুলের বাণিজ্যিক সৌরভ ঘিরে থাকে তাকে। কিন্তু আমি নিশ্চিত; সেই সব কৃত্রিম সৌরভ তার নাসারন্ধ্র ভেদ করে হৃদয় অব্দি কখনোই পৌঁছোয় না। অদৃশ্যে আমার চোখ ভীষণ ক্ষুরধার। তাই সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করিনি...

সারাজীবন মানুষের পাথর হৃদয় দেখে দেখে ক্লান্ত এই আমি প্রথম কোনো পাথরের দেহে প্রেমিক হৃদয় খুঁজে পেলাম।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh