জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩, ০৫:৩৪ পিএম | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বেশ কিছু জায়গায় আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। ছবি: নোয়াখালী, শরীয়তপুর, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার জেলা প্রতিনিধি
প্রতিবারের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বেশ কিছু জায়গায় আজ বুধবার (২৬ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।
এর মধ্যে আছে নোয়াখালী, শরীয়তপুর, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকা।
এসব এলাকার মুসলমানরা সৌদি আরবের সঙ্গে একই দিন রোজা শুরু করেন; একই দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করেন।
সাম্প্রতিক দেশকালের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন:
নোয়াখালী
নোয়াখালীর ৩টি মসজিদে প্রতি বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আযহা উদযাপন করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৮ জুন) সকাল ৯টার দিকে জেলার সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলার ৩টি মসজিদে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ী জামে মসজিদ, জিরতলী ইউপির ফাজিলপুর গ্রামে দায়রা বাড়ী দরজায় মসজিদে ঈদের একটি করে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে, নোয়াখালী পৌরসভার হরিনারায়ণপুর এলাকার পশ্চিম শাহপুর দারোগা বাড়ির দরজায় সকাল ৮টা ও ৯টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, বসন্তেরবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ী জামে মসজিদ ২৫০-৩০০, জিরতলী ইউপির ফাজিলপুর গ্রামে দায়রা বাড়ী দরজায় মসজিদে ১০০-১২০জন এবং নোয়াখালী পৌরসভার হরিনারায়ণপুর এলাকার পশ্চিম শাহপুর দারোগা বাড়ির দরজায় দুটি জামাতে ২৬জন মুসল্লি ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই সুশৃঙ্খলভাবে এই ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
শরীয়তপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শরীয়তপুরের ছয় উপজেলার অন্তত প্রায় ৫০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। বুধবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলার প্রধান ও বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় নড়িয়ার সুরেশ্বর দরবার শরীফ মাঠে।
সুরেশ্বর দরবার শরীফ মাঠে দরবার শরীফের গদিনশিন পীর বেলাল নূরী জামাতের ইমামতি করেন।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন। নামাজ শেষে শাহ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা খিচুড়ি, সেমাইসহ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন।
সুরেশ্বর দরবার শরিফ সূত্র জানান, জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরী নামক এক সুফি এই দরবার প্রতিষ্ঠা করেন। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় সুরেশ্বর গ্রামের পদ্মা পাড়ে অবস্থিত দরবার শরীফটি। সুরেশ্বরের অনুসারীরা প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন।
দরবার শরীফের পীর সৈয়দ তৌহিদুল হোসাইন শাহীন নূরী বলেন, সৌদি আরবসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে মিল রেখে শরীয়তপুরের শাহ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা ঈদুল আজহা উদযাপন করেন। শুধু ঈদ না সব ধর্মীয় উৎসবও পালন করেন তারা।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শতাধিক মুসল্লীরা পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত আদায় করেছেন।
আজ বুধবার (২৮ জুন) সকালে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজ এলাকায় আহমেদ শাবিস্থা নামক একটি বাসার ছাদে ঈদের জামাত অনুুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতে শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ মুসল্লীরা অংশগ্রহণ করেন।
জামাতে ইমামতি করেন আলহাজ্ব আব্দুল মাওফিক চৌধুরী (উজান্ডি পীর)। ঈদের জামাত শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। জামাত শেষে একে অন্যের কোলাকুলি করে একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এ মৌলভীবাজারের সার্টিক হাউস এলাকায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের অনুষ্টিত হয়ে আসছে। এছাড়াও জেলার আরও কয়েকটি স্থানে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের খবর পাওয়া গেছে।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৪ গ্রামের মুসল্লিরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন।
আজ বুধবার (২৮ জুন) সকাল ৮টায় উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি চর, তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট ও একই ইউনিয়নের বোতলা এলাকায় ওই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
উপস্থিত মুসল্লিরা জানান, ২০১১ সাল থেকে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় এবং আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করে আসছেন। তারা বলেন, সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ হবে। এ বিশ্বাস থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কয়েক বছর ধরে এভাবেই ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার ৩টি ইউনিনের ৪টি মসজিদের মুসল্লিবৃন্দ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন। সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রশাসন তাদের নিরাপত্তায় ছিলেন।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে কয়েকটি গ্রামের কিছু মুসল্লিরা।
এ এলাকায় একদিন আগে ঈদ পালন করায় স্থানীয়দের মাঝে আলোচনা সমালোচনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আজ বুধবার (২৮ জুন ) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে জেলার সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ার নতুন জামে মসজিদের ভেতরে এ ঈদের নামাজ আদায় করেন তারা । ঈদের নামাজে ইমামতি ও খুৎবা পাঠ করেন মাওলানা আব্দুল মালেক।
ঈদের নামাজের জন্য সকাল থেকেই জেলার সদর উপজেলার ফলিমারি, দুর্গাপুর, শ্যামপুর, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ও সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হেঁটে,বাইসাইকেল ,মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনযোগে তালুক ঘোড়াবান্ধা মধ্যপাড়ায় জড়ো হতে থাকে। বাহিরে বৃষ্টির কারণে তারা মসজিদের ভেতরে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।
ঈদের জামাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অর্ধশত মুসল্লি এতে অংশ নেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা যথা নিয়মে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন। নামাজ শেষে তারা পশু কুরবানি দেন।
এদিকে, একদিন আগে ঈদ পালনে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
নামাজে আসা কয়েকজন মুসল্লির সাথে হলে তারা বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ পড়তেই আজ সকালে এখানে আসছি। সবাই মিলে ঈদুল-আজহার নামাজ আদায় করলাম। এভাবেই আট বছর ধরে আমরা ঈদ ও কোরবানি করে আসছি।