এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনস্কেল ও বদলি নিয়ে যা বলছে মাউশি-মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৪:৪০ পিএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৪:৪৩ পিএম

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা সরকার থেকে শতভাগ মূল বেতন পান। আর সারা দেশেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মতো বদলি চালুর দাবি করে আসছেন। সে লক্ষ্যে ২০২১ সালের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায়ও বদলি চালু করার পথ খোলা রাখা হয়েছে। তবে সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরেকটি পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিন বছর পার হতে চললেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালুর উদ্যোগ নেই।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১২ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, এনটিআরসিএ’র সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, প্রদর্শক ও প্রভাষকদের কোনো প্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদে ও সমস্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য মন্ত্র নালয় নীতিমালা প্রণয়ন করে জনস্বার্থে আদেশ জারি করতে পারবে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক অধিশাখা) সোনা মনি চাকমা  বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক। ফলে তাদের বদলির ব্যাপারটি মূলত পলিসিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এখনো আমরা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালু করতে হলে আগে নীতিমালা করতে হবে। আর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই করবে। আমাদের দায়িত্ব হবে তা বাস্তবায়ন করা।

জানা যায়, আগে গভর্নিং বডি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষকেরা নিয়োগ পেতেন। ফলে সাধারণত নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চাকরি পেতেন শিক্ষকেরা। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ পান তারা। আর এতে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যাওয়ায় একজন নিবন্ধনধারী তার এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আবেদন করছেন। এতে বেশির ভাগ শিক্ষকই নিজ এলাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাচ্ছেন।

বর্তমানে দেশের প্রায় ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। এসব শিক্ষকদের শতভাগ মূল বেতন দেয় সরকার। তবে এর বাইরে মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান তারা। এ ছাড়া তারা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ।

শিক্ষকেরা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই বেতনে জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবে যদি নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করা যায়, তাহলেও কোনোভাবে জীবন চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু যারা এখন অনেক দূর দুরান্তে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তাদের পরিবার নির্বাহ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সরকার ভাবতে পারে, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বদলি চালু হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু যদি একটা যথাযথ নীতিমালা করা যায় তাহলে খুব সহজেই এই বিশৃঙ্খলা ঠেকানো সম্ভব। শিক্ষকদের নিজ নিজ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে চাকরি জীবনে শুধুমাত্র একবারই এই বদলির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তাহলে শিক্ষকরাও হুটহাট করে বদলি হওয়ার চিন্তা করবেন না।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ চালু হওয়ার পর অনেক শিক্ষকই দূর দুরান্তে চাকরি করছেন। অথচ তার বাড়ির কাছের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ শূন্য হলে সেখানেও কাউকে না কাউকে তো নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাই পদ শূন্য হলে সেখানে আগে বদলি হয়ে আসার সুযোগ দেওয়া উচিত। এই বদলির দাবি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের। তা চালু হলে শিক্ষকরাও মোটিভেটেড হবেন। এতে নিশ্চিতভাবেই পড়ালেখার মান বাড়বে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh