কাঁঠাল খেয়ে বেঁচে আছেন লাখ লাখ শ্রীলঙ্কান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ০২:৪৪ এএম

স্থানীয় বাজারে ফলের দোকানে এক শ্রীলঙ্কান। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় বাজারে ফলের দোকানে এক শ্রীলঙ্কান। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের ৯ জুলাই নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষের মুখে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ক্ষমতাচ্যূত হবার পর দারিদ্রে ধুঁকছেন লাখ লাখ শ্রীলঙ্কান। খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির বড় একটা জনগোষ্ঠী।

তিন সন্তানের বাবা ৪০ বছর বয়সী কারুপ্পাইয়া কুমার বলেন, কাঁঠাল খেয়ে আমরা লাখ লাখ মানুষ প্রাণে বেঁচে আছি। অনাহারের হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে এই কাঁঠাল।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটের আগে প্রতিটি মানুষের ভাত বা পাউরুটি কেনার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু এখন খাবারের দাম এতটাই নাগালের বাইরে চলে গেছে যে বহু মানুষ প্রায় প্রতিদিন কাঁঠাল খেয়ে আছেন। 

এক সময় ফল হিসাবে সবচেয়ে অবজ্ঞা করা হতো যে কাঁঠালকে সেটাই এখন মানুষের প্রাণ রক্ষাকারী আহার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৫ কেজি কাঁঠাল পাওয়া যায় প্রায় এক ডলার সমমূল্যে।

শ্রীলঙ্কার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে। এখন প্রতি দুটি পরিবারের মধ্যে একটিকে বাধ্য হয়ে তাদের আয়ের ৭০% এর বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে খাবারের পেছনে।

তিন সন্তানের মা নাদিকা পেরেরা বলেন, আগে আমরা তিন বেলা খেতাম। এখন খাচ্ছি দুই বেলা। ১২ কেজি ওজনের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম গত বছর পর্যন্ত ছিল ৫ ডলার, এখন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে এখন বাধ্য হয়ে পুরনো পদ্ধতিতে চুলা জ্বালিয়ে রাঁধতে হচ্ছে।

গত বছর শ্রীলঙ্কা তার ইতিহাসে সবচেয়ে নজিরবিহীন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়। দেশটির অর্থনীতি স্থবির হয়ে পরার পর থেকে মানুষের আয় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে।

সঙ্কটে বিপর্যস্ত দেশটিতে বিরামহীন বিদ্যুতের অভাব আর জ্বালানির মজুত ফুরিয়ে আসার পটভূমিতে যে তীব্র জনরোষ সৃষ্টি হয়েছিল তার জেরে জনগণ প্রেসিডেন্ট গোটাাবায়া রাজাপাসের সরকারি বাসভবনে চড়াও হয় গত বছর ৯ জুলাই। এরপর দেশ ছেড়ে পালান রাজাপাকসে।

এরপর দেশটির সরকার দেনদরবার করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ঋণ জোগাড় করতে সমর্থ হলেও দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে দারিদ্র দ্বিগুণ বেড়েছে।

স্বামী ও সন্তান নিয়ে নাদিকা থাকেন রাজধানী কলম্বোর ছোট একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে। সেখানে শোবার ঘর মাত্র দুইটি।

নাদিকা জাতীয় ক্যারাম চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অধিধিকারী সাবেক প্রতিযোগী। কিন্তু তিনি অর্থের অভাবে রয়েছেন। ক্যারাম এশিয়ার জনপ্রিয় একটি খেলা।

কিন্তু ক্যারাম খেলায় রেফারি হয়ে তিনি যে অর্থ উর্পাজন করতেন তা এখন বন্ধ। তার স্বামী এখন জীবিকার তাগিদে ভাড়ায় ট্যাক্সি চালান।

এই নারী বলেন, মাংস বা ডিম কেনার সঙ্গতি এখন আর আমাদের নেই। এসবের দাম বেড়ে গেছে ছয় গুণ। বাস ভাড়া এতটাই বেড়েছে যে আমরা প্রতিদিন বাচ্চাদের বাস ভাড়া জোগাতে পারছি না। ফলে প্রায়ই তাদের স্কুল কামাই করতে হচ্ছে। আমি প্রার্থনা করি যেন এক দিন রান্নার গ্যাস আর বিদ্যুতের বিল কমে আমাদের নাগালের মধ্যে আসে।

গত জুনে মুদ্রাস্ফীতি নেমেছে ১২ শতাংশে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তা ছিল ৫৪ শতাংশ। তারপরও পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

সূত্র: বিবিসি বাংলা (সংক্ষেপিত)

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh