ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম
২১ বছর পর বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছেন হারিয়ে যাওয়া মতিউর। ছবি: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
২০০২ সালে নিখোঁজ হন মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোর মতিউর রহমান। তখন তার বয়স ছিলো ১৫ বছর। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন মতিউরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শহিদুল ইসলাম। তবে ২১ বছর পর ভারত থেকে বাবা-মায়ের কোলে ফিরেছেন সেই ছেলে। এখন মতিউর ৩৬ বছরের মধ্যবয়সী যুবক।
আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরেন মতিউরসহ ভারতের শ্রদ্ধা ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নিতীশ শর্মা এবং চিকিৎসক সারওয়ালি কে কোনডুউইলকার।
মতিউর রহমান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলামের বড় ছেলে। পরিবারের ধারণা, আখানগর ইউনিয়নের কান্তিভিটা ধোনতলা সীমান্ত হয়ে ভারতের পাচির সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের উত্তর দিনাজপুরে চলে যান।
২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে মতিউরকে উদ্ধার করেন দেশটির শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মীরা। এ সংস্থার পক্ষ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন মতিউরের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে সিজোফ্রোনিয়া রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এরপর শ্রদ্ধা পুনর্বাস ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানেই চিকিৎসার মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে তিনি সুস্থ হন।
সুস্থতার পর মতিউরের কাছেই পরিবারের পরিচয় জানতে পারেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। পরে সংস্থাটির সমাজকর্মী নীতিশ শর্মা তার বাংলাদেশি দুই বন্ধুর মাধ্যমে মতিউরের পরিবারের খোঁজ পান। তাদের সহযোগীতায় প্রথমে ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মতিউর।
এরপর দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসেন মতিউর। তাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন বাবা-মাসহ স্বজনরা। এ সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন তারা।
দেশে ফিরে মতিউর রহমান বলেন, আমি কখনোই ভাবতে পারিনি দেশে ফিরে মা-বাবার কোলে আসতে পারব। আমি অসুস্থ ছিলাম, যারা আমাকে সুস্থ করে দেশে ফিরিয়ে দিলো আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
মতিউরের মা মর্জিনা বেগম বলেন, খোদার কাছে সন্তানের জন্যে কেঁদেছিলাম, খোদা আমার কথা শুনেছেন।
মতিউরের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, সন্তান হারানোর কষ্ট যে কত কঠিন তা সবাই বুঝতে পারবে না, আমার পরিবার সেই কষ্ট বুঝেছে। যারা আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমি সারা জীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
মতিউরের ছোট বোন সাইফুন নাহার বলেন, আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন ভাইকে হারিয়েছিলাম।
ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নিতীশ শর্মা বলেন, আমরা পথেপ্রান্তর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করি। মতিউর রহমানকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুশি।
চিকিৎসক সারওয়ালি কে কোনডুউইলকার জানান, মতিউরকে সুস্থ করে দেশে ফিরিয়ে দিতে পারায় তাদের পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে।