বিশ্ব ব্রেস্টফিডিং সপ্তাহ ঘোষণা ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

বিশ্বব্যাপী মাতৃদুগ্ধদানের মায়েদের হার ৭০ শতাংশে উন্নীতের লক্ষ্য ইউনিসেফের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৩:১৩ পিএম

গত এক দশকে বিশ্বের অনেক দেশই শিশুদেরকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতন হয়েছে। আর এই ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে প্রভূত উন্নতি। একসময় যখন কিনা মায়েদের জন্য বিশেষ করে কর্মজীবি নারী কিংবা ভ্রমনরত অবস্থায় শিশুদের জন্য মাতৃদুগ্ধ দানে বেশ বিব্রত হতে হত সেখানে বর্তমানে যুগপোযুগী নানা ইতিবাচক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন মায়েদের জন্য যে কোন স্থানে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজনও করা হয়েছে যাতে একজন মা নিরাপদে শিশুকে ব্রেস্ট ফিড করাতে পারেন। 

পহেলা আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এবারের বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ পান দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘আসুন কর্মস্থলেও ব্রেস্ট ফিডিং অব্যাহত রাখি’। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবারের এই প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে। মূলত কাজের পরিবেশেও যেন নিরাপদে মায়েরা শিশুদেরকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোন বাধার সম্মুখীন না হন সেটিকে জোরালো করতেই নানামূখী পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক এই দুই সংস্থা।  

এদিকে ইউনিসেফ তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, গত এক দশকে বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত- কোটে ডি আইভরি, মার্শাল আইল্যান্ডস, ফিলিপাইনস, সোমালিয়া ও ভিয়েতনামে এ সংখ্যা বাড়ার হার উল্লেখযোগ্য। দেশগুলো যে কোন পরিবেশে এমন ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এটির প্রতি বিশেষ সমর্থন, সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষোকতাও করে আসছে ক্রমাগত, যা চোখে পড়ার মত বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ ও হু।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী এই হার ৭০ শতাংশে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে ইউনিসেফ ও হু। 

তবে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ইতিবাচক কর্মস্থল, পরিবার বান্ধব কর্মপরিবেশ নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য বলেও মন্তব্য ইউনিসেফ সংশ্লিষ্টদের। সমীক্ষা বলছে, একসময় শিশুদের বুকের স্তন্যদান মায়েদের হার আকস্মিকভাবে কমতে শুরু করেছিল। এর জন্য নেতিবাচক কর্মপরিবেশই দায়ী ছিল। তবে বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটি, মাতৃদুগ্ধদানে বিশেষ ছুটি, আলাদা কক্ষের ব্যবস্থাসহ নানা গৃহীত নীতিমালার কারণে এই হার আবারও বাড়তে শুরু করেছে। 

একটি শিশুর জন্মগ্রহনের পর থেকেই মায়ের বুকের দুধ তার জন্য অপরিহার্য মৌলিক একটি খাদ্য উপাদান। এমনকি তার বেঁচে থাকা ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। নানান রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পেয়ে একটি শিশুর দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর বিকল্প নেই। মূল পুষ্টি উপাদান বুকের দুধেই রয়েছে যা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন। এমনকি এটি ছাড়া শিশুর জীবন ধারণ অসম্ভব। আর তাই এটিকে আরও বিকশিত করতে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে বলেও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সমীক্ষা বলছে, বুকের দুধ পান না করা শিশুদের মৃত্যুর হার যারা পান করছে তাদের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি। 

এদিকে মাতৃদুগ্ধ দানের পরিবেশকে আরও ইতিবাচক করতে ইউনিসেফ  ও হু- সরকার, দাতাগোষ্ঠী, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতগুলোর প্রতি তাদের কিছু সুপারিশমালাও তুলে ধরেছে। এগুলোর মধ্যে- রয়েছে- ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য কর্মস্থলে অন্তত একবার হলেও যেন একজন মা শিশুকে বুকের দুধ দিতে পারেন তেমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি (স্থাইয়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মজীবী নারী), বৈতনিক সুবিধাসহ কমপক্ষে ১৮ সপ্তাহ মার্তৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা, এ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচী গ্রহনের মধ্যদিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে  জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাজেট প্রণয়ন। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh