পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০৫ পিএম

ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের কারণে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়, অন্যদিকে মারা যাচ্ছে মানুষ। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের কারণে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়, অন্যদিকে মারা যাচ্ছে মানুষ। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের কারণে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়, অন্যদিকে মারা যাচ্ছে মানুষ।

জেলায় গত ১২ বছরে পাহাড় ধসে ৩১৪ জন মানুষ মারা গেছেন। তারপরও এখনো ঝুঁকিতে বসবাস করছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর পাহাড় দখল করে এসব মানুষ বসবাস করছেন। যা কক্সবাজারের মোট বনভূমির এক-তৃতীয়াংশ। এর বাইরে রোহিঙ্গারা দখল করেছে ৪ হাজার ৮৫৮ হেক্টর পাহাড়। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। ভারী বর্ষণের আগে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে সমতলভূমিতে স্থানান্তর করা না গেলে ব্যাপক প্রাণহানিসহ মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, চিহ্নিত অপরাধী, এমনকি আরও প্রায় ১ লাখ পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়। বসতি স্থাপনের জন্য কক্সবাজার অঞ্চলে কাটা হয় নির্বিচারে পাহাড়। বিশেষ করে বর্ষা এলেই শুরু হয় পাহাড় কাটার উৎসব, পাহাড়ি এলাকা সমতল করে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই এসব কারণে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা।

পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম বলেন, প্রতিবছর কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুধু বর্ষা এলে করা হয়। বর্ষা চলে গেলে থেমে যায় সবকিছু। এর ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে কক্সবাজারের পাহাড় নিধন।

কক্সবাজার শহর ও শহরতলির লাইট হাউস, সৈকত পাড়া, সার্কিট হাউস সংলগ্ন, মোহাজের পাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলী, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া, সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন, লিংকরোড পাহাড়ি এলাকায় হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, প্রতিবছর বর্ষার আগে প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়। এতে কিছুদিন সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও লোকজন পুনরায় সেই স্থানে বসবাস শুরু করে। এতে করে একদিকে যেমন পাহাড়ের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। 

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. সরওয়ার আলম বলেন, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ২ লাখ একর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছে ১৯ হাজার ৮২৬টি পরিবারের ৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছর পাহাড় ধসে কক্সবাজারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। ভারী বর্ষণ হলেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠেন। তা না হলে কোনো খবর থাকে না। একদিকে পাহাড় ধসে মৃত্যু যেমন হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসের কারণে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলে জেলা প্রশাসন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। মাইকিং করে সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। এ সময় কিছু মানুষ সরে এলেও পরে আবার এসে আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh