বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা মিলে সমুদ্রপথে মানবপাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিন মানবপাচারকারী।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিন মানবপাচারকারী।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ১৯ যুবককে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মিয়ানমারে আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবি ঘটনায় মানবপাচারকারীর চক্রের তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীর সদস্য। এদের মধ্যে বাংলাদেশের মূলহোতা ছিলেন মো. ইসমাইল। গ্রেপ্তার অপর দুইজন হলেন, জসিম (৩৫) ও মো. এলাহী (৫০)।

গতকাল শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চলতি বছরের ১৯ মার্চ মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছা পোষণ করেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ২২ জন তরুণ ও যুবক। পরে তাদের কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে চক্রটি। মিয়ানমার থেকে ট্রলারে পাচারকালে ১৯ যুবককে মিয়ানমার কোস্টগার্ড আটক করে। বাকি তিন যুবক অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পৌঁছে যায়। কিন্তু পাচারকারী চক্রের নির্মম নির্যাতনে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরও ভুক্তভোগী যুবক জহিরুল ইসলাম গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান। বাকি দুই যুবক অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। গত ২৮ মে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসা হয়।

মান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা গত ১০ জুলাই আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে তাদের ফিরে পেতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানান। এ ঘটনায় ১৫ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় একটি মানবপাচার আইনে মামলা (নম্বর- ২১/১৪৯) দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গ্রেপ্তার ইসমাইল গত ২০০১-২০০৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থানকালীন মিয়ানমার আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে ইসমাইল দেশে ফিরে এসে মিয়ানমারের রশিদুল ও জামালের সঙ্গে যোগসাজশে ১০ থেকে ১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র গড়ে তোলেন। স্থানীয় এজেন্টদের যোগসাজশে বাংলাদেশে মানবপাচার চক্রটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।

চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবকদের কোনো ধরনের অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশ্বাস দেন। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরে কাজ করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ২২ জনকে পাচার করে। এরপর মিয়ানমারে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করতে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে গ্রেপ্তার ইসমাইল, জসিম ও আলম ৩০ হাজার টাকা করে নেন। চক্রের অন্য সদস্যরা ১০ হাজার টাকা করে পেতো এবং বাকি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মালয়েশিয়া অবস্থানরত রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতেন চক্রের বাংলাদেশ অংশের মূলহোতা ইসমাইল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh