রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৭ পিএম
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার। ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘ দিন চলে আসা নানা অনিয়মের পর এবার জেলখানায় থাকা বন্দিদের কারা হাসপাতালে আরাম আয়েশে রাখার জন্য বছরে কোটি টাকা বাণিজ্যের তথ্য এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে। সম্প্রতি এরকমই ঘুষ নেয়ার একটি গোপন ভিডিও ক্লিপ এবং ঘুষ নেয়া ব্যক্তির সাথে হওয়া একাধিক ফোন কল রেকর্ডও
এসেছে তাদের হাতে।
ভিডিওতে দেখা
যায়, নগরীর সিএনবি মোড়ে বন্দির স্বজনের
কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা গুনে নিচ্ছে আসাদ নামের এক কারারক্ষী। এর আগে অন্য এক
ফোনালাপে কথা হওয়া অডিও ক্লিপটিতে শোনা যায় ২০ হাজার টাকা নিয়ে লক্ষীপুর মোড়ে
আসতে বলছেন আরেক বন্দির নারী স্বজন। ঐ নারী জিজ্ঞাসা করছেন কত টাকা আনতে হবে,
এরপর তিনি বলছেন আমি
বাসায় একা আছি, আমি একজন ছেলে
মানুষকে দিয়ে টাকা পাঠাচ্ছি, এই ফোন সহ…! পরে
এরকম আরও কয়েকটি অডিও ক্লিপ পাওয়া যায়, তাতেও টাকা লেনদেনদের বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে
কারারক্ষী আসাদ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমাকে আমার অফিসার টাকা নিতে পাঠায়। আমি শুধুমাত্র বাহক হিসেবে টাকা এনে দেই।
তিনি বলেন, যে সকল বন্দির
কথা আপনারা বলছেন তারা আমাকে টাকা দিয়েছে সত্য, তবে আমি তৎক্ষনাৎ সেই টাকা আমার অফিসার
ফার্মাসিস্ট ওমর ফারুক স্যারকে দিয়েছি। তবে এই সকল টাকা আমি নিয়ে একা কাউকে
মেডিক্যাল সুবিধা দিতে পারি কি? এটা তো আপনারা
বোঝেন। অফিসারের হুকুমের বাইরে যাওয়ার
সুযোগ নাই। আমাকে অফিসার এখন ভয় দেখাচ্ছে কেন আমি তার কথা বলেছি। অফিসাররা সব
অস্বীকার করে এখন আমাকে ফাঁসাচ্ছে।
জানতে চাইলে
ফার্মাসিস্ট ওমর ফারুক বলেন, আমার কথা
কারারক্ষী আসাদ বলতে পারে না। তাকে দিয়েই আপনাদের ফোন দেওয়াচ্ছি বলে ফোন কেটে দেন।
পরে একাধিকবার তাঁকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করেনি।
মুঠোফোনে
রাজশাহীর জেলার নিজাম উদ্দিন'কে কল দিলে তিনি
রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে
রাজশাহীর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, এমন কোন বিষয় আমার জানা নাই, এমন ঘটবারও কথা নয়; এরকম কোন ঘটনা সত্যি ঘটে থাকলে দোষীদের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা
গেছে, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল
অফিসার জুবায়ের প্রতিটি মেডিক্যাল বন্দির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন। মেডিকেলের
বন্দি বাণিজ্য বহু পুরনো। এর আগেও এদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো
বহুবার। তবে এবার একাধিক কল রেকর্ড ও ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে আসে। তাতে বছরে
প্রায় কোটি টাকার মেডিকেল বন্দি বাণিজ্য হয়। অভিযোগ আছে, এসব টাকার ভাগ যায় জেলার ও সুপারসহ
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবার কাছে।