আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
১৯৬৩ সালে ২৮ আগস্ট প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ছবি: আল-জাজিরা
১৯৬০ সালের বহুল আলোচিত ও সাড়া জাগানো নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে ১৯৬৩ সালে ২৮ আগস্ট প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিলেন বর্ণবাদ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্বনন্দিত মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের একটি ঐতিহাসিক ভাষণের সাক্ষী হতে। সেদিন তার দেয়া ঐতিহাসিক ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে’ শিরোনামের ভাষণের মধ্যদিয়ে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষাঙ্গদের মধ্যে জাতিগত বিভেদ ও বৈষম্য দূর করতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন মার্টিন লুথার।
আর আজ তার ওই ভাষণ ও সমাবেশের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শনিবার ওয়াশিংটনের লিংকল মেমোরিয়ালের সামনে এক সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার জনতা। সেখানে উপস্থিত সমবেত নাগরিকরা জানান, কিংয়ের স্বপ্ন আর দেখানো কর্মের ফল আবারও নতুন করে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
১৯৬৩ সালের ওই দিন তিনি জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্যের অবসান ঘটাতে ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে রাজধানী ওয়াশিংটনে জড়ো করেছিলেন। আর অনেকের মত, সেদিনের ফলস্বরূপ ১৯৬৪ সালে নাগরিক অধিকার আইন পাশের মাধ্যমে সে সমাবেশের সফলতা এসেছিল।
এবারে সেই ঐতিহাসিক দিনতি স্মরণ করতেই ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপল এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা নানা সংগঠনের আয়োজনে লিংকন মেমোরিয়ালে উপস্থিত হন হাজার হাজার জনতা।
নাগরিকদের দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টারের প্রধান মারগারেট হুয়াং বলেন, ৬০ বছর আগের ওই মহাসমাবেশটি জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণের আজকের এই দুয়ার উন্মুক্ত করেছিল।
তিনি বলেন, ‘’আমাদের ব্যালট, আমাদের শরির, আমাদের স্কুলের পাঠ্যবই- এসব কিছু একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। যখন আমাদের ভোটাধিকার নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হবে তখন আমাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকারেরও পতন ঘটবে। এমন বিষয়গুলো হতে আমাদের দৃষ্টি সরে গেছে।‘’
এ সময় আফ্রিকান আমেরিকান পলিসি ফোরামের নির্বাহী পরিচালক কিমবারলি ক্রেনশো বলেন, আজ এমন সময় এ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন কিনা একটি কঠিন সময় আমরা অতিক্রম করছি।
আরও বলেন,"ঐতিহাসিক সেই সমাবেশটি স্মরণ করা হচ্ছে কিন্তু এরইমধ্যে আম্মাদের চ্যালেঞ্জগুলোকে বিকৃত করে ফেলা হচ্ছে।"
ক্রেনশো বলেছেন, তথাকথিত "সমালোচনামূলক জাতি তত্ত্ব"র ওপর ভিত্তি করে শ্রেনীকক্ষের বেশ কিছু পাঠ্যবইয়ে কয়েকটি রাজ্যে যেসব নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। এটি বর্ণবাদের উত্তরাধিকারের পথে বাধা হিসাবে দেখা যাচ্ছে যা কিনা আমেরিকান ইতিহাসের পরিপন্থী।
এ সময় রেভারেন্ড আল শার্প্টন, কিং এর ছেলে মার্টিন লুথার কিং তৃতীয়, তার নাতনী ইয়োলান্ডা রেনি কিং এবং হাউজের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিসও বক্তব্যে অংশ নেন।
মার্কিন অ্যান্টি ডিমাফেশন লীগের পরিচালক জোনাথন গ্রীনব্ল্যাট তার বক্তব্যে বলেন, কিংয়ের দেখা সেই স্বপ্নের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যে স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার আইন পাশ হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি গর্ভপাত সংক্রান্ত সুপ্রীম কোর্টের দেয়া রুলটি আবারও ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে সোমবার (২৮ আগস্ট) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সমাবেশে অংশ নেয়া নাগরিক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষ।
সূত্র: আল-জাজিরা