জবি শিক্ষার্থী খাদিজার দ্রুত মুক্তির দাবি

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৪৭ পিএম

খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: জবি প্রতিনিধি

খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: জবি প্রতিনিধি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার বিনা বিচারে কারাবন্দির এক বছর অতিবাহিত হওয়ার প্রতিবাদে এবং দ্রুত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।

মানববন্ধনে খাদিজাতুল কুবরাকে বিনা বিচারে ৩৬৫ দিন জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন শিক্ষার্থীরা। খাদিজাকে আটকের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। খাদিজাকে যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দেওয়া হয়েছে তা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারে না বলেও দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাক স্বাধীনতা বলে আমাদের যে একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে সেটার সুফল আমরা পাচ্ছি না। দেশে যদি বাক স্বাধীনতা থাকতো তাহলে আমাদের সহপাঠী খাদিজাকে বিনা বিচারে দীর্ঘ এক বছর কারাগারে বন্দী থাকতে হতো না।

আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে আমরা খাদিজার বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তারা বলেছে খাদিজাকে নিয়ে যারা কথা বলবে, তারাও রাষ্ট্র বিরোধিতার অপরাধে দোষী হবে। যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী জেলে থাকলেও নির্লিপ্ত অবস্থান গ্রহণ করে। এ ধরনের প্রশাসন আমাদের দরকার নেই।

মানববন্ধনে খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, আমার বোন কী অপরাধ করেছে? আজ এক বছর ধরে জেলে আছে। জেলে দেখা করতে গেলে খাদিজা জিজ্ঞাসা করে, কেন আমি এতদিন কারাগারে? তখন আমাদের কাছে কোনো উত্তর থাকে না। আমার বোন কেন কারাগারে? সে কী এমন অপরাধ করেছে যে তাকে বিনা বিচারে এতদিন জেলে আটকে রাখতে হবে? আমার বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আগামী নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে যেন সে পরীক্ষা দিতে পারে তার দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে খাদিজাকে আমি পাশে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। কোন অপরাধে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো? শুধু একটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করার জন্য এত দিন জেলে রাখতে হবে? আজ সকলেই আছে কিন্তু আমার পাশে আমার মেয়ে নেই। আমার মেয়েকে যেন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। খাদিজা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত। আমি আমার মেয়েকে চিকিৎসাও করাতে পারলাম না। খাদিজার চিন্তায় আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। একটা শিক্ষার্থী এত দিন কারাগারে আছে, সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সে একট মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে। দ্রুত খাদিজাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।

দুইটি মামলারই অভিযোগে বলা হয়, খাদিজাতুল কুবরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা, মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রয়াস চালাচ্ছেন তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh